মোদির ভুলের চড়া মাশুল গুনছে ভারত, মার্কিন শুল্ক মারাত্মক আঘাত হানছে অর্থনীতিতে

প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫

মোদির ভুলের চড়া মাশুল গুনছে ভারত, মার্কিন শুল্ক মারাত্মক আঘাত হানছে অর্থনীতিতে

ডেস্ক রিপোর্ট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হঠাৎ করে শুল্ক আরোপ ভারতের অর্থনীতিতে তীব্র আঘাত হেনেছে, যা মোদি সরকারের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশলগুলোর ব্যর্থতাকে সামনে এনেছে।ভারতের ৬৫ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের রপ্তানির উপর ৫০% শুল্ক দেশটির অর্থনৈতিক ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে বস্ত্র, গহনা, সামুদ্রিক খাদ্য এবং চামড়ার মতো শিল্পগুলো পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, সরাসরি ৪১-৪৫ বিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি হবে এবং লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে।সমালোচকরা বলছেন, এই সংকট শুধু বাহ্যিক চাপের কারণে নয়, বরং মোদি সরকারের ভুল অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নীতির সরাসরি পরিণতি এটি। এর মধ্যে রাশিয়ার তেল নিয়ে জুয়া খেলার বিষয়টিও রয়েছে। ভারত এখন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সংকটের মুখে পড়েছে, যা তার রপ্তানি-নির্ভর প্রবৃদ্ধির মডেলকে বিপন্ন করছে। এক দ্রুত পদক্ষেপেই ট্রাম্প ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজারগুলোকে অত্যধিক ব্যয়বহুল করে তুলেছেন।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রম-নির্ভর খাতগুলো: বস্ত্র, জুতা, গহনা, সামুদ্রিক খাদ্য এবং চামড়া। তামিলনাড়ুর তিরুপুরের মতো উৎপাদন কেন্দ্রগুলো, যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক পোশাক তৈরি করেন, সেখানে কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শ্রমিকরা ভয় পাচ্ছেন, চাকরি হারালে তাদের সম্পূর্ণ সর্বনাশ হয়ে যাবে। বস্ত্রের উপর কার্যকর শুল্ক ১২% থেকে বেড়ে ৬২% হয়েছে, এবং চিংড়ির উপর ৬০% হয়েছে, যা ভারতীয় পণ্যকে বিশ্ব বাজারে অপ্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে, যেখানে ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলো প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাচ্ছে।গহনা শিল্প, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার (৭.৪ বিলিয়ন পাউন্ড) আয় করে এবং মোট বাণিজ্যে এর ৩০% অংশ রয়েছে, সেটিও পতনের দ্বারপ্রান্তে। রপ্তানিকারকরা ৭৫% পতনের আশঙ্কা করছেন, যা সুরাট, জয়পুর এবং মুম্বাইয়ের লাখ লাখ দক্ষ শ্রমিকের জীবিকাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। সামুদ্রিক খাদ্য শিল্প, যা ৫.৫ বিলিয়ন পাউন্ডের রপ্তানি করে, সেটিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ চিংড়ি রপ্তানির দুই-তৃতীয়াংশ যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

রপ্তানিকারকরা স্বীকার করছেন, ভারতীয় চিংড়ি মার্কিন বাজারে আর সাশ্রয়ী থাকবে না এবং ইকুয়েডরের মতো দেশ (দেশটির উপর মাত্র ১৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে) তারা ভারতের স্থান দখল করবে। সামগ্রিকভাবে, এই খাতগুলোতে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যার মধ্যে শুধু চিংড়ি শিল্পে কয়েক মিলিয়ন শ্রমিক কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট শুধু শুল্কের প্রতিফলন নয়, বরং মোদি সরকারের ত্রুটিপূর্ণ কৌশলেরও প্রতিফলন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর অত্যধিক নির্ভরতা, অন্যান্য বাজারে বৈচিত্র্য আনতে ব্যর্থতা, ইউরোপ, আসিয়ান বা আরসিইপি-এর সাথে কোনো চুক্তি না করা, শ্রম-নির্ভর খাতগুলোতে প্রতিযোগিতার অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক কূটনীতির পরিবর্তে ট্রাম্পের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর নির্ভরতা। ট্রাম্প খোলাখুলিভাবে বলেছেন, সস্তা রুশ তেল কেনার জন্য এবং মে মাসে ভারত-পাকিস্তান বিরোধের বিষয়ে তার “শান্তিরক্ষা” দাবি প্রত্যাখ্যান করার জন্য ভারতকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

জুলাই মাসে আরোপিত ২৫% শুল্ক শিল্পগুলোর জন্য সহনীয় ছিল, কিন্তু আগস্টে ৫০% এ বৃদ্ধি পাওয়াটা ছিল বিধ্বংসী, কারণ বেশিরভাগই কেবল ১০-১৫% আশা করেছিল। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই ধাক্কা ভারতের জিডিপি ১ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। যদিও প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৮%, এখন রপ্তানি, মজুরি এবং ভোগ ক্ষতিগ্রস্ত আঘাত পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদি এই শুল্ক তিন থেকে ছয় মাস ধরে চলতে থাকে, তাহলে ভারত তার রপ্তানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হারাতে পারে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এর প্রভাব অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উভয়ই হবে, কারণ “মেক ইন ইন্ডিয়া” স্লোগান এখন ফাঁপা মনে হচ্ছে।বর্তমানে, ভারতীয় শিল্পগুলো সহনীয় ঋণ, রপ্তানি সহায়তা এবং বাণিজ্য চুক্তির সন্ধান করছে। মোদি সরকার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের দিকে যাওয়ার এবং ৪০টি দেশে একটি বস্ত্র প্রচারাভিযান শুরু করার কথা বলেছেন। তবে, সমালোচকরা এই পদক্ষেপগুলোকে বাস্তব পদক্ষেপের পরিবর্তে কেবল আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করছেন। আপাতত, ভারত তার নিজের ভুলের ভারে জর্জরিত। নীতির অবহেলা, কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং দূরদর্শিতার অভাব দেশটিকে এমন এক ঝড়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে যা শ্রমিক এবং শিল্পগুলোকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ