যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে ‘জরুরি’ ডকেটের বিস্তার, ট্রাম্পের ক্ষমতা বাড়ছে

প্রকাশিত: ৭:০১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে ‘জরুরি’ ডকেটের বিস্তার, ট্রাম্পের ক্ষমতা বাড়ছে

ডেস্ক রিপোর্ট: লিবারেল বিচারপতি এলেনা কাগান সম্প্রতি আবারও সতর্ক করেছেন-কনজারভেটিভ সংখ্যাগরিষ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বারবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার নীতিমালা কার্যকর করার অনুমতি দিচ্ছে, আইনগত বৈধতা পর্যালোচনার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছাড়াই।বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়াটার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
৬-৩ অনুপাতে কনজারভেটিভ সংখ্যাগরিষ্ঠ আদালত গত সপ্তাহে ট্রাম্পকে ৪০০ কোটি ডলারের বিদেশি সহায়তা আটকে রাখার অনুমতি দেয়, যদিও এক বিচারক বলেছিলেন তিনি কংগ্রেস অনুমোদিত অর্থ ব্যয় করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন না। কাগান ভিন্নমত পোষণ করে লিখেছেন, এত গুরুতর বিষয়ে ‘জরুরি ডকেট’ ব্যবহার করা সমীচীন নয়, কারণ এতে আদালতের পূর্ণাঙ্গ শুনানি, যুক্তি-বিতর্ক ও রায় প্রদানের প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সাধারণত আদালত নয় মাসের কার্যকাল জুড়ে মামলাগুলো নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে শুনানি ও রায় দিয়ে থাকে। কিন্তু ট্রাম্প জানুয়ারি ২০ তারিখে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে আদালত তার নীতিসংক্রান্ত ২৩টি মামলায় জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিয়েছে-যার মধ্যে ২১ বারই তার পক্ষে রায় এসেছে, একটি মামলা অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা হয়েছে।রয়টার্সের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আদালত অন্তত ছয়টি ভিন্ন আইনি পথে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই কনজারভেটিভ বিচারপতিদের সিদ্ধান্ত দ্বারা চালিত। সমালোচকরা বলছেন, এতে ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতা কার্যত বাড়ছে এবং কংগ্রেসসহ ফেডারেল বিচারকদের কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ছে।

কীভাবে আদালত ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছে

ফেডারেল বিচারকদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে চারটি মামলায় ট্রাম্পের পক্ষ নিয়েছে আদালত। যেমন, প্রবেশন পর্যায়ের হাজারো কর্মী ছাঁটাইয়ের চ্যালেঞ্জ জানানো এনজিওগুলো আইনি অবস্থান রাখে না বলে রায় দিয়েছে।দুটি মামলায় নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে-যার একটি ট্রাম্পকে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই চালিয়ে যেতে সুযোগ দিয়েছে।
ডেমোক্র্যাট কর্মকর্তাদের বরখাস্তের ক্ষেত্রে আদালত ইঙ্গিত দিয়েছে, এ সংক্রান্ত পুরোনো নজির বাতিল হতে পারে।দুটি মামলায় নিম্ন আদালতের এখতিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে-যার একটি ছিল ১৭৯৮ সালের আইন ব্যবহার করে ট্রাম্পের বিতাড়ন কার্যক্রম।

নিজস্ব পূর্ববর্তী জরুরি সিদ্ধান্তকে নজির হিসেবে ব্যবহার করেছে-যেমন, এনআইএইচের সংখ্যালঘু ও এলজিবিটিকিউ গবেষণার অনুদান কেটে দেওয়া।একটি মামলায় মৌখিক শুনানি শেষে রায় দিয়েছে-যেখানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত করার ট্রাম্পের প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।

ক্ষমতার সীমানা প্রসারিত হচ্ছে

ব্রাডলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক তারালেই ডেভিস বলেন, “আদালত কার্যত জরুরি ডকেটের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে, অথচ আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করছে না।” এর ফলে ট্রাম্পের প্রশাসন বিতর্কিত নীতিগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর করতে পারছে এবং আইনগত লড়াই চললেও নীতিগুলো বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে।আদালতের জরুরি সিদ্ধান্তে ট্রাম্প সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডার নিষিদ্ধকরণ, ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই, সংস্থা প্রধানদের অপসারণ এবং অভিবাসীদের তৃতীয় দেশে ফেরত পাঠানো-সবই চালিয়ে যেতে পেরেছেন। মামলার চূড়ান্ত রায় ভিন্ন হলেও এসব নীতি বাস্তবায়ন হয়ে গেলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন হতে পারে।টুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন গ্রিফিন বলেন, “এগুলো কেবল স্থিতাবস্থা বজায় রাখছে না, বরং বাস্তব জীবনে অনেকের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনছে।”

লিবারেল বিচারপতিদের সতর্কবার্তা

লিবারেল বিচারপতিরা বারবার সতর্ক করছেন, জরুরি ডকেট দিয়ে যেন নতুন আইন সৃষ্টি না হয়। সেপ্টেম্বরে কাগান লিখেছিলেন, “আমাদের নিজের নজির যেটা নিষিদ্ধ করে, সেটাই এখন অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।”বিচারপতি কেতাঞ্জি ব্রাউন জ্যাকসন আগস্টে জরুরি ডকেটকে কমিক স্ট্রিপ ঈধষারহ ধহফ ঐড়ননবং-এর খেলার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “এখানে একটাই নিয়ম-কোনো নিয়ম নেই। আরেকটা নিয়ম হলো, এই প্রশাসন সবসময় জেতে।”গ্রিফিন আরও বলেন, আদালত বিশেষত অভিবাসন, পররাষ্ট্রনীতি ও কর্মকর্তাদের বরখাস্তের মতো ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে সবসময় প্রাধান্য দিয়েছে। কনজারভেটিভ বিচারপতিরা ‘ঁহরঃধৎু বীবপঁঃরাব’ তত্ত্বকে সমর্থন করছেন, যা নির্বাহী শাখার সমস্ত ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে দেয়।

আদালতের ভবিষ্যৎ ভূমিকা

ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ৩০০-এর বেশি মামলা হয়েছে। তবে প্রশাসন কেবল বেছে নেওয়া কয়েকটি মামলা আদালতে নিয়ে যাচ্ছে। উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি ল’ স্কুলের অধ্যাপক জোনাথন অ্যাডলার বলেন, এসব মামলায় সরকারের যুক্তি তুলনামূলকভাবে সহজে উপস্থাপন করা যায়।যদিও ভবিষ্যতে কিছু মামলায় আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় দিতে পারে, আপাতত কনজারভেটিভ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ট্রাম্পকে সুবিধা দিচ্ছে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিশেষজ্ঞ পিটার শেন বলেন, “আদালত হয়তো এখনই এমন কোনো স্পষ্ট রায় দিতে চাইছে না, যেটা ট্রাম্প উপেক্ষা করতে পারেন।”

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ