যুক্তরাজ্যের সমুদ্র সৈকতের শহর ‘কর্নওয়াল’ ঘুরে আসুন

প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫

যুক্তরাজ্যের সমুদ্র সৈকতের শহর ‘কর্নওয়াল’ ঘুরে আসুন

ডেস্ক রিপোর্ট:গ্রীষ্ম মানেই সমুদ্র বিলাস। সামারে উইকেন্ড কিংবা হলিডে ছাড়াও সপ্তাহ দুয়েক ছুটি নিয়ে সবাই বেরিয়ে পড়েন সমুদ্র অবগাহনে। ইংল্যান্ড গোটা দেশটাই একটা আইল্যান্ড। তাই সমুদ্র দেখার জন্য জায়গার অভাব নেই এখানে। মোটরওয়েতে তখন সাঁই সাঁই করে গাড়ির পর গাড়ি ছুটতে দেখা যায়। বেশিরভাগ গাড়িগুলোতেই লাগানো থাকে ট্রেইলার। ট্রেইলার বা গাড়ির ছাদ ঠাসা থাকে সার্ফিং আর ক্যাম্পিংয়ের সরঞ্জামাদি দিয়ে। আর গাড়ির মিউজিক প্লেয়ারে হাই ভলিউমে চলতে থাকে গান। ব্রিটিশ মোটরওয়ের এই উৎসবমুখর পরিবেশ দেখার মতো একটা ব্যাপার বটে!

সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ঘুরতে যাওয়া ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা এই সামার হলিডেতে ওয়েলস এর রাজধানী ভেলপাস যাওয়ার জন্য মুটামুটি রেডি তখন হঠাত করেই যুক্তরাজ্যের 2A NEWS এর আবদুল হান্নান ভাই বললেন, ভেলপাস যাওয়া হবে না। তখন আর কি করা। তখন আমার মেয়ে শাজমীন ইসলাম চৌধুরী বললেন আব্বু আমরা ‘কর্নওয়ালেই’ যাই না কেন! ‘কর্নওয়াল’ ঘুরে আসলে নাকি ইংল্যান্ডে সমুদ্র দেখার জন্য আর কোথায় যেতে ইচ্ছে করবে না!

তখন আমি আর আমার ওয়াইফ সিদ্ধান্ত নিলাম কর্নওয়াল যাবো। তখন আমরা মেয়েকে বললাম তারাতাড়ি হোটেল বুকিং দাও। কিন্তু একটা একটা করে দেখলো। কোন হোটেল বুকিংয়ের জন্য পাচ্ছে না। অবশেষে আমরা এক দিনের জন্য পেলাম নিউকিতে ট্রেভেল লজ। এর পর আর তিন দিনের জন্য পেলাম নিউকিতে প্রিমিয়ার ইন হোটেল।হোটেলটির পরিবেশসহ সব কিছুই ভালো। হোটেল বুকিং য়ের কাজ শেষ করে আমরা ২৪ আগস্ট ২০২৫ যুক্তরাজ্যের নর্থাম্পটন শহর থেকে আমাদের ইস্ট হান্সবাড়ী থেকে সকাল ১১টায় বেড়িয়ে পরলাম কর্নওয়াল যাওয়ার উদ্দেশ্যে। প্রায় ৬ ঘন্টা ড্রাইভ করে কর্নওয়ালের নিউকিতে গিয়ে পৌঁছিলাম বিকাল ৫ টায়। তখন সমস্যা দেখা দিলো পার্কিংয়ের। অনেক কস্ট করে পেলাম আজদা সুপার মার্কেটে।তা আবার ২ ঘন্টার প্রে করে আসলাম।পরে ২৪ ঘন্টার জন্য ১৫ পাউন্ড করে রাখতাম হোটেলের পিছনে। তার পর বিকাল বেলায় ফ্রেস হয়ে ছুটলাম সমুদ্র সৈকত দেখার জন্য। হোটেলের পাশে তরকারন সমুদ্র সৈকত। দেখে খুব ভালো লাগছে।

ছোট-বড় প্রচুর বালুকাময় সমুদ্র সৈকত থাকায়, কর্নওয়াল এখন ইংল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। সমুদ্র আর পাহাড়ের মেলবন্ধনে এক ভূস্বর্গের নাম কর্নওয়াল! সার্ফিং, ফিশিং, প্যারা সেইলিং-সহ নানা রকম ওয়াটার অ্যাক্টিভিটির জন্য কর্নওয়াল ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে প্রথম সারির পছন্দের জায়গা।

তবে পুরাতত্ত্বের দিক দিয়েও কর্নওয়াল সমৃদ্ধ। প্রচুর ঐতিহাসিক দুর্গ আর প্রাসাদ আছে এখানে। ইংল্যান্ডের এই কাউন্টির একমাত্র শহর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হচ্ছে ট্রুরো। কর্নওয়ালের উত্তর ও পশ্চিম দিকে কেল্টিক সাগর, দক্ষিণে ইংলিশ চ্যানেল আর পূর্ব দিকে টেমার নদী। এখানকার লোকসংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। কর্নিশ জাতির আবাসভূমি এবং প্রাচীন ছয়টি কেল্টিয় দেশের একটি বলে কর্নওয়ালকে গণ্য করা হয়।

ফিস্ট্রাল বিচ

আসার পর দিন ২৫ শে আগস্ট ২০২৫ সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে চলে যাই ফিস্ট্রাল বিচ দেখার জন্য। মাত্র ১০ মিনিটের ড্রাইভ করে গিয়ে সেখানে পৌঁছিলাম। কার টিকেট কেটে রাখলাম। আর আমরা নিচের দিকে রওয়ানা দিলাম। ফিস্ট্রাল বিচ খুব সুন্দর লাগছে। দেখে মনে হচ্ছে আমরা বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছি। যে বড় বড় ঢেউ।

ফিস্ট্রাল বিচ নিউকেতে অবস্থিত এবং এটি ব্রিটিশ সার্ফিংয়ের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এই প্রশfস্ত সোনালী বালুকাময় সৈকতটি প্রায় ১ মাইল লম্বা এবং ভাটার সময় ১ মাইল প্রশস্ত হওয়ায় পরিবারের জন্য দুর্দান্ত জায়গা প্রদান করে, তবে সমুদ্রে প্রবেশের সময় দয়া করে সাবধান থাকুন কারণ এখানে তীব্র স্রোত তৈরি হতে পারে এবং ঢেউগুলি সাধারণত এলাকার অন্যান্য সৈকতের তুলনায় বড় হয় কারণ এটি আটলান্টিক ঢেউয়ের সংস্পর্শে বেশি আসে।

ফিস্ট্রাল সৈকত টোয়ান হেডল্যান্ড দ্বারা উপেক্ষা করা হয় এবং লিটল ফিস্ট্রালের কাছে উত্তর তীরে আপনি সৈকতকে উপেক্ষা করে একটি হোটেল দেখতে পাবেন, এই হোটেলটি নিউকে এবং ফিস্ট্রালের সমার্থক, যা হেডল্যান্ডের উপরে অবস্থিত সৈকতের বেশিরভাগ পিছনে অবস্থিত। ফিস্ট্রাল একটি খুব পারিবারিক বন্ধুত্বপূর্ণ সৈকত যা বালির টিলা দ্বারা সমর্থিত এবং এর পিছনে নিউকে গল্ফ কোর্স রয়েছে। গ্রীষ্মকালে এটি ব্যস্ত সময়ে খুব ব্যস্ত হতে পারে এবং সৈকতে আপনার জায়গা পেতে গরম গ্রীষ্মের দিনে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা মূল্যবান, যদিও চিন্তা করবেন না কারণ এই অঞ্চলে আরও অনেক সৈকত রয়েছে।

ফিস্ট্রাল প্রায়শই তিনটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত, সাউথ ফিস্ট্রাল, নর্থ ফিস্ট্রাল এবং লিটল ফিস্ট্রাল, যা কেবল ভাটার সময়ই দেখা যায়। যেহেতু এটি কর্নওয়ালের অন্যতম প্রধান সৈকত, তাই এখানে আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যেমন টয়লেট, আইসক্রিমের দোকান, পোশাকের দোকান, সার্ফ ভাড়া এবং সৈকতের পাশে অবস্থিত রেস্তোরাঁ। গ্রীষ্মকালে ফিস্ট্রালের উপর দিয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করা এবং সার্ফাররা দিগন্তে ঢেউয়ের আভাস পাওয়া দুর্দান্ত।রাতে নিউকির জামান্স রেস্টুরেন্টে মালিক ইশান ভাই আমাকে বললেন ভাই আজ রাতের খাবার আমাদের রেস্টুরেন্টে খেতে হবে।তার পর হোটেল থেকে ৩ মিনিটে ড্রাইভ করে জামান্স রেস্টুরেন্টে গেলাম।রাতের মজাদার খাবার খেলাম।পরে রাত ১২ টায় হোটেলে চলে আসলাম।

ল্যান্ডস এন্ড

আমরা হোটেল প্রিমিয়ার ইন থেকে ২৬ শে আগস্ট ২০২৫ কর্নওয়ালের নিউকি থেকে ১ ঘনটা ড্রাইভ করে ল্যান্ডস এন্ড রওয়ানা দিলাম রুদ্র উজ্জ্বল এক সকালে। পৌঁছালাম তখন রোদ ঝলমলে দুপুর।

পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম! সমুদ্রের এমন রূপ তো আগে দেখিনি! স্বচ্ছ নীল জলরাশি পাহাড়ের গায়ে এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার কিসের এক মায়ায় ফিরে ফিরে আসছে বারবার। এ যেন অভিমানী যুগলের মধুর খুনসুটি। অনেকখানি ঢালু পথ দিয়ে নেমে সমুদ্রকে যখন খুব কাছে পেলাম তখন আরেকবার বিহ্বল হবার পালা! সমুদ্রের কাছে অনেকবার গিয়েছি। আর প্রতিবার সমুদ্রকে আবিষ্কার করেছি নতুন রূপে।

ল্যান্ডস এন্ড হচ্ছে ইংল্যান্ডের শেষ সিমানা।শেষ পোস্ট অফিস।তখন আমার নিউজ এর নেশায় পড়ে গেলাম।রথ ও দেখা হবে ,কলা ও বেছা হবে।

আমি একের পর পর্যটকদের ইন্টারভিউ নিচ্ছি।ল্যান্ডস এন্ড দেখার মত।না দেখলে বুঝাতে পারবো না।আহ কি সুন্দর ল্যান্ডস এন্ড।কর্নওয়ালের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ল্যান্ডস এন্ড’। এটি ইংল্যান্ডের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের শেষ ভূসীমানা। এখানে এসে ইংল্যান্ড মিলিত হয়েছে আটলান্টিক মহাসাগরের বিস্তৃত জলরাশির সঙ্গে। এখান থেকে দূরের লাইট-হাউজটাকে বড় নিঃসঙ্গ দেখায়।

পর্যটকরা বিখ্যাত ল্যান্ডস এন্ড সাইন এর নিচে ছবি তোলার জন্য বিশাল লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।কর্নওয়ালের ‘ল্যান্ডস এন্ড সাইনের নিচে ছবি তোলার জন্য লাইন আর লাইন। খুব চমৎকার লাগছে।

ল্যান্ডস এন্ড হল যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি অত্যাশ্চর্য উপকূলীয় রিসোর্ট। ইংল্যান্ডের পশ্চিমতম বিন্দু হিসেবে, এটি গ্রেট ব্রিটেন জুড়ে এন্ড-টু-এন্ড হাঁটার জন্য টার্মিনাস হিসেবে কাজ করে।

কর্নওয়াল কীভাবে ঋতু থেকে ঋতুতে পরিবর্তিত হয় তা দেখতে পাহাড়ের চূড়ায় হেঁটে যেতে পারেন, অথবা প্রথম এবং শেষ বিন্দু থেকে শুরু হওয়া আটলান্টিক মহাসাগরের হাজার হাজার মাইল পথের কথা ভাবতে পারেন।

ল্যান্ডস এন্ডের সুন্দর দৃশ্য: বিখ্যাত ল্যান্ডস এন্ড সাইনপোস্টে ছবি না তুলে কোনও ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয় না।

ল্যান্ডস এন্ড ব্রিটেনের অন্যতম প্রিয় ল্যান্ডমার্ক, যা তার অনন্য অবস্থান এবং সুন্দর দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।

ভিনদেশে পড়ে থাকলেও দেশকে ভোলার জো নেই। ভালো-মন্দে প্রিয় স্বদেশ বারবার মনের আঙ্গিনায় এক্কাদোক্কা খেলে।

আমরা ফিরে যাই হোটেলে। সেখান থেকে ইন্ডিয়ান কুইন্স রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ হোসাইন দুলু ভাই আমন্ত্রণে তার রেস্টুরেন্টে খাবার খাই।ধন্যবাদ দুলু ভাই।রাত কাটে আমাদের গল্পে। ৪ দিন আর ৩ রাত আমরা কাটিয়ে দেই।

টিন্টাজেল ক্যাসেল

এরপর আমরা গেলাম ‘টিন্টাজেল ক্যাসেল’ দেখতে। অবশ্য ক্যাসেল না বলে এর ধ্বংসাবশেষ বলাই শ্রেয়। ধারণা করা হয় এই দুর্গটি প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ব্যাপার হলো রাজা আর্থারের কিংবদন্তির সঙ্গে যুক্ত এই টিন্টাজেল ক্যাসেল। ইতিহাসবিদদের কেউ কেউ মনে করেন এটিই রাজা আর্থারের জন্মস্থান। সেই তর্ক-বিতর্ক তোলা থাক। সমুদ্রের গা ঘেঁষে পাহাড়ের উপর এই ক্যাসেলটি এক কালে কতটা দৃষ্টিনন্দন ছিলো তা এই অবশিষ্টাংশ দেখেও টের পাওয়া গেলো। পাহাড়ের সঙ্গে দুর্গটির সংযোগের জন্য একটি চমৎকার সেতু রয়েছে। তবে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আট ফুট লম্বা কিং আর্থারের চোখ ধাঁধানো ব্রোঞ্জের মূর্তি ‘গ্যালোস’। ২০১৬ সালে এই মূর্তিটি স্থাপন করা হয়। দুর্গটি জুড়ে প্রচুর সিঁড়ি রয়েছে ওঠানামার জন্য। সমুদ্রের কাছে যাওয়ার জন্য দুর্গ থেকে অনেকখানি নিচে নামতে হয়। এই দুর্গের সঙ্গে লাগোয়া সৈকতে আছে ‘মার্লিন কেইভ’ নামে একটি গা ছমছমে গুহা।

‘সেইন্ট মাইকেল মাউন্ট ক্যাসেল’ দেখতে যাবো। সেইন্ট মাইকেল মাউন্ট যেন আমাদের ছেঁড়া দ্বীপ। যাওয়ার সময় হেঁটেই ক্যাসেলে প্রবেশ করলাম, কিন্তু ফিরতে হলো নৌকায় করে। মিনিট দশেকের বোট জার্নি মনে করিয়ে দিলো ট্রলারে করে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে যাওয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। এ দুর্গের বাগানটা আমাকে আকর্ষণ করলো খুব।

ল্যান্ডস এন্ড থেকে চার মাইল দূরে ‘মিনাক থিয়েটারের’ উদ্দেশ্যে

‘মিনাক থিয়েটার’ একটি উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ। কর্নিশ ভাষায় মিনাক শব্দের অর্থ পাথুরে জায়গা। আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে পাহাড়ের উপর নির্মিত থিয়েটারটির অনবদ্য নির্মাণশৈলী দেখে হাজার বছর আগের গ্রিক বা রোমান স্থাপত্য বলে মনে হয়। যদিও থিয়েটারটির বয়স একশো বছরেরও কম।

থিয়েটারটি বানিয়েছিলেন রোয়েনা কেইড নামের এক ভদ্রমহিলা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি ও তার মা কর্নওয়ালে স্থায়ীভাবে চলে আসেন। মিনাক পয়েন্টে চমৎকার বাগান সমেত তিনি একটি বাড়ি তৈরি করেন। ১৯৩২ সালে এই বাগানেই প্রথম মঞ্চায়িত হয় উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘দ্য টেম্পেস্ট’ নাটকটি। এরপর থেকে প্রতি গ্রীষ্মে নাটক মঞ্চায়নের উদ্দেশ্যে কেইড তার দলবল নিয়ে শীতকালে কাজে নেমে পড়তেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের পূর্ণাংগ এই থিয়েটারটি। এমন একটা নৈসর্গিক জায়গায় বসে থিয়েটার দেখছি এই ভাবনাটাই আমাকে বিস্মিত করলো। যদিও সেদিন কোন মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী না থাকায় দেখার সৌভাগ্য হলো না। থিয়েটারটির বাগানে এখনও নানা ধরনের গাছপালা আর ফুলের সমারোহ দেখতে পাওয়া যায়। আগ্রহীরা চাইলে কিনেও আনতে পারবেন।

‘মোয়ানা’ যার নামের অর্থ গভীর জলরাশি

মিনাক থিয়েটার যে পাহাড়ে অবস্থিত তার গা ঘেঁষেই ‘পর্থকার্নো সি-বিচ’। তবে খাঁড়া পাহাড়ি রাস্তা ধরে নামাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প পথে গাড়ি করে কিছুটা গিয়ে খানিকটা হাঁটলেই সমুদ্র সৈকতটির দেখা পাওয়া যায়। এ পথটাই বেশ নিরাপদ। আমরা এ পথে করেই সৈকতটা ঘুরে আসলাম। বাচ্চারা বালুকাবেলায় ছোটাছুটি করে বেশ ভালো সময় কাটালো।

ইডেন প্রজেক্ট

২৭ আগস্ট ২০২৫ সকালে নাস্তা খেয়ে আমরা রওয়ানা দিলাম ইডেন প্রজেক্টে। এটি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইন্ডোর ফরেস্ট। বিশ্বের সব দেশের মত বাংলাদেশের কলা গাছ,আম গাছ,সুপারী গাছ,আখের গাছ,রক্ত জবা,ডুমুর সহ নানা জাতের গাছ।কেউ এ জায়গায় যেতে বুলবেন না।জন প্রতি ৪২ পাউন্ড খরচ করে টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হয়।প্রায় ৫ ঘন্টা পাহাড়ের উচু নিচু পথ পাড়ি দিয়ে অনেক কিছু দেখলাম। খুব ভালো লেগেছে।

ইডেন প্রকল্পের একটি দৃশ্য: আপনি যদি কর্নওয়ালে পরিবার-বান্ধব ছুটি কাটাতে যান, তাহলে সম্ভবত আপনার দৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই ইডেন প্রকল্পটি রয়েছে।

বুদবুদের মতো জৈববস্তুপুঞ্জ এবং বিশ্বজুড়ে উদ্ভিদের অসাধারণ পরিসরের সাথে, ইডেন প্রকল্পটি জৈবিক প্রকৌশলের একটি দুর্দান্ত কীর্তি এবং এটি কর্নওয়ালের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ – একটি সত্যিকারের পরিদর্শনযোগ্য স্থান!

আপনি হয়তো আইকনিক কাঠামোটি চিনতে পারেন, কিন্তু এই আকর্ষণ সম্পর্কে আপনি আর কী জানেন?

ইডেন প্রকল্পের ভিতরে একটি গোলাপী উদ্ভিদ

ইডেন প্রকল্প কী?

দক্ষিণ কর্নওয়ালের একটি পুরানো চীনা মাটির গর্তে নির্মিত, ইডেন প্রকল্পটিতে জৈববস্তুর একটি নির্বাচন রয়েছে। এই বিশাল গ্রিনহাউস-সদৃশ কাঠামোগুলি স্ফীত প্লাস্টিক কোষ থেকে তৈরি যা ইস্পাত ফ্রেম দ্বারা সমর্থিত।

এই অনন্য কাঠামো কৃত্রিম জলবায়ু তৈরির সুযোগ করে দেয়, যেখানে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং মরুভূমির পরিবেশ থেকে অসংখ্য স্থানীয় উদ্ভিদ বিকশিত হতে পারে।

দুটি প্রধান জৈববস্তু যথাক্রমে রেইনফরেস্ট এবং ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অনুকরণ করে এবং অত্যাশ্চর্য উদ্ভিদের বিশাল নির্বাচন ধারণ করে।

এই সাইটটিতে বিস্তৃত বহিরঙ্গন বাগান এবং বিভিন্ন শিল্প স্থাপনা এবং প্রদর্শনীও রয়েছে।

১. ইডেন প্রকল্পটি ২০০১ সালে খোলা হয়েছিল

মিলেনিয়াম কমিশন দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি উপায় হিসাবে, ইডেন প্রকল্পটি ২০০১ সালের মার্চ মাসে খোলা হয়েছিল।

বিশ্বে এই স্কেলের কোনও ভবন না থাকায়, সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী দর্শকরা এটিকে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন! এটি শুরু থেকেই অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল, প্রথম চার মাসে ১০ লক্ষেরও বেশি দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করেছিল।

২. সাইটটি চিত্রগ্রহণের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে

১৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি কার্যকর মাটির গর্ত হিসেবে কাজ করার পর, ইডেন প্রকল্পের মূল স্থানটি ১৯৮১ সালের বিবিসি সিরিজ দ্য হিচহাইকারস গাইড টু দ্য গ্যালাক্সির চিত্রগ্রহণের স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছিল।

২০০২ সালে, ইডেন প্রকল্প নির্মাণের পর, এটি আবার জেমস বন্ড চলচ্চিত্র ডাই অ্যানাদার ডে-এর চিত্রগ্রহণের স্থান হয়ে ওঠে।

৩. ইডেন প্রকল্পের খরচ ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি

সামগ্রিকভাবে, ইডেন প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে ১৪১ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়েছে।

মিলেনিয়াম কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি অনুদান এবং ঋণের মাধ্যমে এই নির্মাণকাজটি অর্থায়ন করা হয়েছিল – যার অর্থ জাতীয় লটারি থেকে – এবং ইউরোপীয় পুনর্জন্ম তহবিল থেকে।

যেহেতু এটি ২০০০ সালে সম্পূর্ণরূপে অর্থায়ন করা হয়েছিল, তাই এই স্থানটি কর্নওয়াল এবং সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের উৎস হয়ে উঠেছে – এটি চালু হওয়ার পর থেকে স্থানীয় অর্থনীতিতে ১ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি অবদান রেখেছে বলে মনে করা হয়।

৪. বায়োমগুলি একটি বিশেষ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি

বায়োমের কোষগুলির ষড়ভুজাকার আকৃতি সাবানের বুদবুদের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল এবং মাটির গর্তের অসম আকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল যেখানে তারা তৈরি করা হয়েছিল।

প্রতিটি কোষ ইথিলিন টেট্রাফ্লুরোইথিলিন কোপলিমার (ETFE) এর তিনটি স্তর দিয়ে তৈরি যা একটি বালিশ তৈরি করতে স্ফীত হয়। ক্লিংফিল্মের মতো, ETFE কাচের চেয়ে হালকা কিন্তু গাড়ির ওজন সহ্য করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। এটি ভিতরের গাছপালাগুলির জন্য UV আলোও প্রবেশ করতে দেয়।

যদি প্লাস্টিক পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয়, তবে এটি অ্যাবসেইলারদের দ্বারা করা হয় যারা কাঠামোটি স্কেল করে।

রেইনফরেস্ট বায়োমে ক্যানোপি ওয়াকওয়ে

৫. ইডেন প্রকল্পটি বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর রেইনফরেস্টের আবাসস্থল

ইডেনের গ্রীষ্মমন্ডলীয় বায়োমে উদ্ভিদের একটি অবিশ্বাস্য নির্বাচন রয়েছে যা বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর রেইনফরেস্ট তৈরি করে! ১,০০০ টিরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদের সাথে, দেখার এবং অভিজ্ঞতার জন্য প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, বিশেষ করে ক্যানোপি ওয়াকওয়েতে যাওয়ার সময় যা আপনাকে দুর্দান্ত উচ্চতা থেকে অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখায়। জৈববস্তুর তাপমাত্রা ১৮ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে পৌঁছায় যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার জলবায়ুর প্রতিলিপি তৈরি করে এমন একটি আর্দ্র পরিবেশ তৈরি করে।

৬. ইডেন প্রকল্প একটি দাতব্য সংস্থা

ইডেন প্রকল্প একটি দাতব্য সংস্থা, যদিও সরকারি সংস্থাগুলি থেকে এটি যে অর্থ পায় তার পরিমাণ তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। এখন এটি একটি সামাজিক উদ্যোগ হিসাবে দেখা হয়, ইডেন প্রকল্প গেট রসিদ এবং অন্যান্য রাজস্ব প্রবাহের মাধ্যমে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।

তা সত্ত্বেও, ইডেন প্রকল্প এখনও তার দাতব্য নীতিকে মূল্য দেয়, এটিকে তাদের বেশিরভাগ কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে। তারা সাইটে অনেক শিক্ষামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে, পাশাপাশি আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে কথোপকথনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের খ্যাতি ব্যবহার করে।সব মিলিয়ে চার দিনের কর্নওয়াল সফরটা আমাদের খুব ভালো লেগেছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ