প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫
ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের কেরালায় সম্প্রতি মস্তিষ্কখেকো জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নেগলিরিয়া ফাওলরি জীবাণুর কারণে প্রাথমিক আমিবিক মেনিংগোএন্সেফালাইটিস রোগের প্রকোপ বেড়েছে, যা একটি বিরল এবং মস্তিষ্কে প্রাণঘাতী সংক্রমণ। গত ৯ মাসে সেখানে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে তিন মাসের এক শিশুও রয়েছে। গত মাসে কোঝিকোড়ে ৫২ বছর বয়সী নারীর মৃত্যু হয় এবং সেপ্টেম্বর মাসে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে আরও অনেক সক্রিয় রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৫২ জন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। রোগীদের বয়স ৩ মাস থেকে ৯১ বছর পর্যন্ত, এর মধ্যে ৩৩ পুরুষ এবং ১৯ নারী। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে একাধিক ক্লাস্টার রিপোর্ট হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর প্রাদুর্ভাব হিসেবে চিহ্নিত।এর আগের বছর ২০১৪ সালে কোঝিকোড়, মালাপুরম ও কান্নুরে নেগলিরিয়া ফাওলরি সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর কেন্দ্রীয় তদন্ত এবং সতর্কতামূলক নির্দেশিকা জারি করা হয়। খবর গালফ নিউজের।
প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন যে, শুধু পুকুর, হ্রদ বা সুইমিং পুলে সাঁতার কাটলে এই জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে, কারণ পানি নাকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলেই ইনফেকশন শুরু হয়। তবে সম্প্রতি একাধিক আক্রান্তের মধ্যে শিশু-নারী-পুরুষ রয়েছে যাদের পুকুরে সাঁতার কাটতে দেখা যায়নি। তারা শুধুমাত্র বাড়ি বা ফ্ল্যাটের বাথরুমে গোসল করেছিল। এবার তাদের আক্রান্তের ঘটনায় আগের ধারণাটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশ্বব্যাপী এই রোগে আক্রান্তের মৃত্যুহার ৯৭ শতাংশ। তবে কেরালায় এর সুরক্ষা হার অনেক বেশি, প্রায় ২৪ শতাংশ, কারণ দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং উন্নত চিকিৎসার কারণে। তবে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে গেছে।
এই আমিবা উষ্ণ মিঠা পানি যেমন পুকুর, নদী, অযত্নে রাখা কুয়া এবং অপর্যাপ্ত ক্লোরিনযুক্ত সুইমিংপুলে থাকে। এটি নাকের ভেতর দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং মস্তিষ্কে গিয়ে কোষ ধ্বংস করতে থাকে। এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়ায় না এবং সমুদ্রের পানিতে ছড়াতে পারে না। প্রাথমিক উপসর্গ (১-১২ দিনের মধ্যে) উচ্চমাত্রায় জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, বমি, শক্ত ঘাড়। পরবর্তী উপসর্গ বিভ্রান্তি, সিজার, বিভ্রম, ভারসাম্যহীনতা, কোমা। চিকিৎসা না করা হলে, ৫-৭ দিনের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে। কেরালা কর্তৃপক্ষ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ‘ওয়াটার ইজ লাইফ’ ক্লোরিনেশন ক্যাম্পেইন চালু হয়েছে বিভিন্ন কুয়া, ট্যাংক এবং পাবলিক স্নান এলাকার জন্য। আক্রান্ত এলাকায় জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিবেশগত নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে পানির উৎস থেকে এবং সিএসএফ ও নাকের সোয়াব পরীক্ষাও চলছে।
হাসপাতালগুলো, বিশেষ করে কোঝিকোড় মেডিকেল কলেজ, হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। গোসল করতে পুকুর বা নদীতে না যাওয়ার জন্য এবং বাড়ির কুয়ারে ক্লোরিনেশন নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা প্রচার চলছে। নিজেকে কীভাবে নিরাপদ রাখবেন: অপরিষ্কার পুকুর, নদী বা স্থির পানি থেকে সাঁতার কাটতে বা গোসল করা এড়িয়ে চলুন। বাড়ির কুয়ার এবং সুইমিং পুলে সঠিকভাবে ক্লোরিনেশন নিশ্চিত করুন।নাক পরিষ্কার করতে ফুটানো বা ফিল্টার করা পানি ব্যবহার করুন।উন্মুক্ত জলাশয়ে গোসল করার সময় নাকে ক্লিপ পরুন যাতে পানি নাকে ঢুকতে না পারে। পানি সংক্রমণের পর জ্বর, মাথাব্যথা বা স্নায়ু সম্পর্কিত উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। কেরালা এখন এক বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী মস্তিষ্কখেকো আমিবার প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। একাধিক জেলায় বিস্তার ঘটানো এই সংক্রমণ গরম, দূষিত পানি এবং বর্ষা মৌসুমের কারণে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। দ্রুত সচেতনতা, নিরাপদ পানি ব্যবহারের অভ্যাস এবং তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা কেরালার একমাত্র সুরক্ষা হতে পারে।
A Concern Of Positive International Inc
Mahfuzur Rahman Mahfuz Adnan
Published By Positive International Inc, 37-66, 74th Street Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Phone : 9293300588, Email : info.shusomoy@gmail.com,
………………………………………………………………………..
Design and developed by Web Nest