প্রকাশিত: ৬:২৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
ডেস্ক রিপোর্ট: গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে বলে ব্রিটিশ দৈনিক ফিনান্সিয়াল টাইমস এক প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করেছে। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পত্রিকাটির প্রকাশিত এ ডকুমেন্টারির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের হারানো বিলিয়নস: চোখের সামনেই লুট’। ডকুমেন্টারিতে উল্লেখ করা হয়, আন্দোলনকারী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে তারা অনুসন্ধান করেছে কীভাবে এই বিপুল অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে এবং সেটি ফেরত আনার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না।
ডকুমেন্টারির শুরুতেই শেখ হাসিনার নাটকীয় ক্ষমতাচ্যুতির প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। সেখানে ছাত্রনেত্রী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি ও রেজওয়ান আহমেদ রিফাদসহ ফিনান্সিয়াল টাইমসের দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরোপ্রধান জন রিড, পণ্যবাজার সংবাদদাতা সুজানাহ স্যাভেজ, স্পটলাইট অন করাপশন-এর উপপরিচালক হেলেন টেইলর এবং ব্রিটিশ সংসদীয় প্রতিবেদক রাফে উদ্দিন অংশ নেন। প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হয়, পাচার হওয়া অর্থ বিদেশে নেওয়া হয়েছে বাণিজ্যে অতিরিক্ত বা কম ইনভয়েসিং, হুন্ডি ও হাওয়ালা পদ্ধতি এবং যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনাবেচার মাধ্যমে। বিশেষ করে লন্ডনকে উল্লেখ করা হয়েছে প্রধান গন্তব্য হিসেবে, যেখানে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিস্তৃত আর্থিক খাত ও লাভজনক সম্পত্তি বাজার এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় ছিল।
এতে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যরা—যার মধ্যে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও রয়েছেন—বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির মামলায় অবকাঠামো প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত। এছাড়া প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নামও উল্লেখ করা হয়েছে অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে। জন রিড জানান, তারা এমনসব ঘটনার বর্ণনা শুনেছেন যেখানে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বন্দুকের মুখে ব্যাংকের পরিচালককে অপহরণ করে জোরপূর্বক পদত্যাগ করিয়েছেন এবং তাদের শেয়ার শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠদের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য করেছেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মোশতাক খান বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি কোনো গোপন বিষয় ছিল না। তিনি আরও বলেন, ‘সেই সময় যা ঘটেছে, তার অনেক কিছুই যেন চলচ্চিত্রের গল্পের মতো। আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু কারাবন্দি ছিলেন কুখ্যাত এক কারাগারে, যার নাম ছিল ‘হল অব মিররস’ বা ‘আয়না ঘর’। কারণ ভেতরে গেলে শুধু নিজেকেই দেখা যেত।’
তিনি উল্লেখ করেন, গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় প্রাক্তন শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠরা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ফিনান্সিয়াল টাইমসের সংবাদদাতা সুজানাহ স্যাভেজ বলেন, ‘আমরা প্রায়ই মনে করি স্বৈরতন্ত্র ও ব্যাপক দুর্নীতি যেন কেবল দূরদেশেই ঘটে। কিন্তু বাস্তবে এটি বৈশ্বিক সমস্যা, আর যুক্তরাজ্যও এর কেন্দ্রবিন্দু।’তিনি আরও বলেন, অর্থ লুট হয়েছে- সেটা জানা এক বিষয়, কিন্তু তা ফেরত আনা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। সম্পদ পুনরুদ্ধারের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো—প্রায়শই চুক্তি বা সমঝোতার প্রয়োজন হয়, অর্থ লুটকারীদের সঙ্গেই সমঝোতায় পৌঁছাতে হয়। এতে প্রশ্ন ওঠে—কতটা অর্থ ফেরত আনা যাবে আর তা জনগণের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে। ফৌজদারি মামলার জন্য খুবই কঠোর প্রমাণের মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ পুনরুদ্ধার টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা ইফতি ইসলাম বলেন, ‘এটি ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল প্রক্রিয়াগুলোর একটি।’
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকেও প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয়।ইফতি ইসলাম বলেন, ‘অনেকে বলেন, সব ফেরত আনা সম্ভব নয়। আমি বলি, যতটুকু সম্ভব ততটুকু আমাদের লক্ষ্য। আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ খুঁজতে হবে, লেনদেনের ধারা অনুসরণ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সহায়তা নিতে হবে।’তিনি উল্লেখ করেন, এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে ব্যাংক ও ব্যবসা খাত থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লোপাট হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত এটি বিশ্বের ইতিহাসে কোনো দেশের সবচেয়ে বড় অর্থপাচার।’সুজানাহ স্যাভেজ বলেন, এ অর্থ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য হবে। তবে অর্থ পাচারে অভিযুক্ত কংগ্লোমারেটগুলো ভবিষ্যত সরকারগুলোর ওপর প্রভাব ধরে রাখবে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়।জন রিড বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপ্লব হয়তো এক মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত। তবে আবারও এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যেখানে একদল রাজনীতিবিদ ক্ষমতা পুরোপুরি কুক্ষিগত করবে।’অধ্যাপক মোশতাক খান বলেন, ‘যেসব মৌলিক প্রতিষ্ঠান এখন সামনে এসেছে, সেগুলোর সংস্কার অপরিহার্য। যে-ই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এই সংস্কার ঠেকানো কঠিন হবে।’প্রামাণ্যচিত্রটি শেষ হয় ছাত্রনেত্রী হৃদির বক্তব্য দিয়ে: ‘আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় হলো, আমরা হয়তো আমাদের শহীদদের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবো না।’
A Concern Of Positive International Inc
Mahfuzur Rahman Mahfuz Adnan
Published By Positive International Inc, 37-66, 74th Street Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Phone : 9293300588, Email : info.shusomoy@gmail.com,
………………………………………………………………………..
Design and developed by Web Nest