এনসিটিবিতে দুর্নীতির অভিযোগে এনসিপি নেতা তানভীরের নাম, সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়

প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২৫

এনসিটিবিতে দুর্নীতির অভিযোগে এনসিপি নেতা তানভীরের নাম, সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়

অনলাইন ডেস্ক:

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব এ বি এম গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরকে নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে নেট দুনিয়ায়। চলতি বছরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই ছাপানোর কাগজ কেনায় কমিশন-বাণিজ্য নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে তাঁর নাম এসেছে।

সোমবার (১০ মার্চ) গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ডিসি নিয়োগের তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্র সমন্বয়কের নাম এসেছিল গাজী সালাউদ্দিন তানভীর ওরফে তানভীর আহমেদের। এনসিটিবির বিতর্কে তাঁর নাম নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

চলতি বছরে এনসিটিবির পাঠ্যবই ছাপানোয় কাগজের বাজারদরের চেয়ে টনপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।

নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ না কিনলে বই ছাপার ছাড়পত্র মেলেনি। এভাবে শুধু কাগজ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেশি কমিশন-বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তাসহ গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরের বিরুদ্ধে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি তথ্য পেলাম, নতুন গঠিত রাজনৈতিক দলেও তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে দলে পদ পেয়েছেন।

আমি সাংবাদিক ভাইদের বলব, গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে নিয়ে আপনারা বিস্তার অনুসন্ধান করেন, অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে। একজন অপরিচিত মানুষ কেন এত প্রভাবশালী, আপনাদের কি জানতে ইচ্ছে করে না?’

ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে গাজী সালাউদ্দিনের জড়িত থাকার প্রসঙ্গে রাশেদ বলেন, ডিসি নিয়োগের যে তথ্য গণমাধ্যমে এসেছিল, তা অসত্য ছিল না। এই লোকটিকে ছাত্র সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সমস্ত কাজ করিয়েছে।

নতুন দল এনসিপি, দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থাকে বলব, তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করুন। গণমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগসংক্রান্ত সংবাদ থাকার পরেও তাঁকে কারা এনসিপিতে অন্তর্ভুক্ত করল, এতটুকু বের করতে পারলে এনসিপি, দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থা সকল তথ্য পাবে।

এবি জুবায়ের নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ভদ্রলোকের নাম গাজী সালাউদ্দিন তানভীর। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব। আগেও নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জেলার ডিসি নিয়োগ, বদলি-বাণিজ্য ইত্যাদি করে সচিবালয়ে ধরা পড়েছিলেন।

ইস্ট মিনিস্টার সোসাইটি বাংলাদেশ পেজের এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘এই গাজী সালাহউদ্দিন তানভীর ওরফে সমন্বয়ক তানভীরের নাম মনে আছে? এই লোকটা হাতেনাতে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের রুমে ধরা খেয়েছিল ডিসি নিয়োগ-বাণিজ্যের সময় এবং ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।

তখন তাঁর বয়স দেখে অনেকে হাসিঠাট্টা করে উড়িয়ে দিয়েছিল যে সে ছাত্র হয় কীভাবে ও ভুয়া সমন্বয়ক বলে। এটা বলেও ট্রল হয়েছিল, যুগ্ম সচিব বিশ্বাস করল কীভাবে! আজকে সে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব। তাহলে নিশ্চয়ই সেই যুগ্ম সচিব চিনতে ভুল করেননি। তিনি সঠিকই ধরতে পেরেছিলেন।’

গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের ফেসবুক পেজ থেকে জানা যায়, তিনি বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও চুয়েটের সাবেক ছাত্র। তাঁকে সারজিস আলমের বিয়ের অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে। একই টেবিলে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আল ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে বসে থাকার একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে।

এনসিটিবির টাকা লোপাটের বিষয়ে প্রতিবেদনকে ইঙ্গিত করে সারজিস আলম এক পোস্টে রাখাল রাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানালেও সেখানে সালাহউদ্দিনকে নিয়ে কিছু বলেননি।

সারজিসের ওই পোস্টের স্ক্রিনশটসহ এক পোস্টে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ফিরোজ আহমেদ লিখেছেন, ‘রাখাল রাহাকে যারা চেনেন, তারা দুর্নীতি বিষয়ে এই সব ফালতু অভিযোগের ন্যূনতম পাত্তা দেবে না।

এই ছেলে যখন ছাত্রলীগের হয়ে মাঠ কাঁপাত, রাখালদা তখন হাসিনার শিক্ষানীতির বিপদ নিয়ে অল্প কয়েকজন লোকের সাথে বিপজ্জনব সব কর্মসূচি পালন করেছে। এই ছেলে যখন ৮ দফা দিয়ে বেড়াচ্ছে, রাখালদা তখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সব কাজ করেছে বন্ধুদের নিয়ে।’

এসব বিষয়ে ফেসবুকে দুটি পোস্ট দিয়েছেন গাজী সালাহউদ্দিন তানভীর। ওই দুটি পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘রাখাল রাহার মতো একজন নাস্তিকের সাথে আমার কীভাবে যোগসূত্র হতে পারে? এটা তো শয়তানও বিশ্বাস করবে না।

এই সংবাদে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে জড়ানোর বিরুদ্ধে আমি আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। যে সাংবাদিকেরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, কেউ একবারও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কিসের ভিত্তিতে আমার নাম রাখাল রাহার মতো একজন নাস্তিকের সাথে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করল? জবাব চাই।’

তানভীর আরও বলেন, ‘এই কথিত কাগজ সিন্ডিকেটের সাথে আমার জড়িত থাকার বিষয়ে দেশের বিদ্যমান সব ডিজিএফআই, এনএসআই তদন্ত করুক।

তদন্ত করে যদি এক টাকার আর্থিক সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমি বিদ্যমান যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব। আর যদি প্রমাণ করতে না পারে, আমার ক্যারেক্টার অ্যাসাসিনেশনের এই হীন প্রচেষ্টার জন্য প্রোপাগান্ডা প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।’

একটি গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে নেমেছে দাবি করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘রাখাল রাহার সঙ্গে আমাকে জড়ানো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর চক্রান্ত। কথায় কথায় ধর্মকে প্রতিপক্ষ বানায় যারা, তারা নতুন রাজনৈতিক দলে একজন দাড়ি টুপিওয়ালার অবস্থানকে সহ্য করতে না পেরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।

মূল অভিযোগ রাখাল রাহার বিরুদ্ধে হলেও নিউজে একটা কয়েক শব্দের বাক্যে আমাকে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আবার, দেশব্যাপী রাখাল রাহার বিরুদ্ধে সচেতন না করে, আমাকে হাইলাইট করা হচ্ছে।

যেন আসল দোষী রাখাল রাহার বিরুদ্ধে কিছুই নাই। এই চক্রান্ত আপনাদের বুঝতে হবে। মেইন অ্যাটেনশন সরায়ে ধর্মকে, দাড়ি-টুপিকে প্রতিপক্ষ বানানোর চেষ্টায় তারা সফল হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বারবার বলছি, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত হোক। তারা প্রমাণ করুক। নয়তো সবাইকে ক্ষমা চাইতে হবে। ডিসি নিয়োগের সময়ও আমাকে জড়ানো হয়েছিল।

ডিসি নিয়োগ দিয়ে অর্থ বিনিময়ের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে তদন্ত কমিটিতে কয়েকজন উপদেষ্টাও ছিলেন।

তদন্ত কমিটি পরে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল যে ডিসি নিয়োগে এমন কোনো লেনদেনের সংশ্লিষ্টতা পায়নি। আমার জড়িত থাকারও কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ