প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন বাইডেন-ট্রাম্প, ঝুলছে বয়সের খাঁড়া

প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৪

প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন বাইডেন-ট্রাম্প, ঝুলছে বয়সের খাঁড়া

ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন এবং ডনাল্ড ট্রাম্পের বয়স ভোটারদের কাছে বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে আছে, যা এড়াতে পারবেন না দুইজনের কেউই। যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বুড়ো দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন এবং ডনাল্ড ট্রাম্প প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হতে চলেছেন।
তাদের বয়স এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে উদ্বেগের একটি বড় বিষয় হয়ে আছে, যা এড়াতে পারবেন না দু’জনের কেউই। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন এবং তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এত দিন দূর থেকে একে অপরকে বাক্যবাণ ছুড়েছেন। এবার বৃহস্পতিবার আটলান্টায় বিতর্কে মুখোমুখি লড়াই করবেন তারা। আর পর্দায় তাদের এই বিতর্কে চোখ রাখা আমেরিকানরা দুইজনের শারিরীক-মানসিক শক্তির তুলনা করার সুযোগ পেয়ে যাবেন ভালভাবেই।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচার তুঙ্গে থাকার এই সময়ে জনমত জরিপগুলোতে এখন পর্যন্ত বাইডেন-ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই মুখোমুখি বিতর্কে নামছেন তারা। আটলান্টার ৯০ মিনিটের এ বিতর্ক অনুষ্ঠানে উন্নত প্রযুক্তির একাধিক ক্যামেরার সামনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলবেন, যার মধ্যে থাকবে অর্থনীতি থেকে শুরু করে বিদেশে চলমান যুদ্ধ, অভিবাসন এমনকী গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের বিষয়ও। তাছাড়া, ট্রাম্প আমলের ‘ব্যর্থ কোভিড-নীতি’, আর্থিক ঘাটতি, ‘মিথ্যাচার’ এবং ক্যাপিটলে দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলতে পারেন বাইডেন। আবার বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় নিরাপত্তায় অবহেলা’, ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতার মতো প্রসঙ্গ টেনে আনতে পারেন ট্রাম্প। এতসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তারা মুখ ফসকে ভুল কিছু বলে ফেললে বা আমতা আমতা করলে তা জনমনে তাদের বয়স নিয়ে উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এতে উল্টেপাল্টে যেতে পারে ভোটের সমীকরণ। তবে বয়সের বিচারে এ বিতর্কে দুইজনের মধ্যে বিশেষত, বাইডেনের জন্য প্রানবন্ত বিতর্ক করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের এই বুড়ো প্রেসিডেন্ট তার স্ট্যামিনা এবং মানসিক উপযুক্ততা নিয়ে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। বাইডেনের ৮১ বছর আর ট্রাম্পের ৭৮ এ মূলত বেশি ফারাক নেই। দুজনের বয়সই বলতে গেলে সমান। তবে জনমত জরিপগুলোতে দেখা যায়, ট্রাম্পের তুলনায় বাইডেনের বয়স নিয়েই মানুষ বেশি উদ্বিগ্ন। অথচ ট্রাম্প যদি নির্বাচনে জেতেন, তাহলে তার মেয়াদ শেষের আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেনের রেকর্ড ভেঙে ফেলবেন।

তারপরও বয়সের দিক থেকে বাইডেনের তুলনায় একটু সুবিধাজনক অবস্থানেই আছেন ট্রাম্প। মার্চে নিউ ইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা পরিচালিত কলেজ জরিপে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটারই মনে করে বাইডেন ‘প্রেসিডেন্ট পদের জন্য একটু বেশিই বুড়ো’। সব বয়সের ভোটারই প্রেসিডেন্টের ফিটনেস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আর ট্রাম্পের বয়স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মাত্র ৪২ শতাংশ মানুষ। যদিও দুইজনের বয়সে মাত্র তিনবছরের ফারাক। এর কারণ কি সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিটিক্সের পরিচালক সাবাতো বলেন, “দুইজনের বয়স নিয়েই মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাইডেনকে দেখতে বুড়ো লাগে বেশি।”হোয়াইট হাউজের ফিজিশিয়ান এবছর বাইডেনকে দায়িত্ব পালনের যোগ্য বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাইডেন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার বয়স নিয়ে উদ্বেগ চলে আসছে।

সম্প্রতি কয়েকবছরে বাইডেনের বুড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণও অনেক বেশি প্রকাশ পেয়েছে। বহুবার বাইডেনকে মুখ ফসকে ভুল করা, দুর্বলভাবে কথা বলা, একজনের সঙ্গে আরেকজনের নাম গুলিয়ে ফেলা, চলাফেরায় আড়ষ্ঠভাব এমনকী অনুষ্ঠানের মঞ্চে পড়েও যেতে দেখা গেছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে বিমান বাহিনী একাডেমির এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় মঞ্চে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন বাইডেন। ঘটনাটি পত্র-পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল। হোয়াইট হাউজের কমিউকেশনস ডিরেক্টর তখন বলেছিলেন, মঞ্চে একপাশে একটা ছোট বালির ব্যাগ ছিল। তাতে হোঁচট খেয়েই বাইডেন পড়ে যান। কিস্তু তাতেই যে বাইডেনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কা দূর হয়েছে তা নয়। তবে বাইডেনের প্রচারশিবির এখনও আশাবাদী। তারা বলছেন বাইডেন আগেও অনেক বড় বড় বক্তৃতা, ভাষণ ভালভাবেই দিয়েছেন। স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণও তিনি ভাল দিয়েছিলেন। তাই এবারও বিতর্কে বাইডেন ভাল করবেন। ওদিকে,বিতর্কের আগে ট্রাম্পও বলেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেন বিতর্কে প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যেতে পারেন। ভাল বিতর্ক করতে পারতে পারেন তিনি। “আমি তাকে খাটো করতে চাই না”, বলেন ট্রাম্প।

যদিও বাইডেনকে নিয়ে আলাদা এক মন্তব্যে ট্রাম্প বলেছেন, তার এই প্রতিদ্বন্দ্বী বিতর্কে ভাল পারফরমেন্স করার জন্য প্রাণশক্তি বর্ধক ওষুধ খেতে পারেন। তবে বাইডেনের প্রচারশিবির বলছে, একথা ডাহা মিথ্যা। বয়সের দিক থেকে বাইডেনের কার্যকলাপ মানুষ যতটা নজরে রাখে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে ততটা নয়। যদিও সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকেও নিজের বয়স এবং মানসিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। গত জানুয়ারিতে নির্বাচনী প্রচারের মাঠে ট্রাম্পেরই রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালি সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বয়স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। হ্যালি বলেছিলেন ট্রাম্পের ‘মানসিক সক্ষমতা পরীক্ষা’ করা উচিত।

পরে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ফিজিশিয়ান গতবছর নভেম্বরে ট্রাম্পের ‘বুদ্ধিবৃত্তিক পরীক্ষার ফল অসাধারণ’ বলে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তবে ট্রাম্প অতিসম্প্রতি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, তারা বাইডেন এবং তার বয়স নিয়ে দ্বিমুখী নীতি নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি একটু ভুল শব্দ বলে ফেললেই তারা বলে আমার স্মৃতিশক্তি কমে গেছে। যেখানে বাইডেন দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছেন, মঞ্চে পড়ে যাচ্ছেন, সিঁড়িতে পড়ছেন, পড়েই চলেছেন।”তবে সম্প্রতি রিপাবলিকান এবং ডানপন্থি গণমাধ্যমগুলো বাইডেনের মানসিক দক্ষতা নিয়ে আক্রমণ জোরদার করেছে। তারা সম্পাদনা করা এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও ক্লিপও ছড়াচ্ছে। পাল্টা জবাব দিতে ছাড়ছেনা বাইডেনের প্রচার শিবিরও। তরাও ট্রাম্পের বয়স নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এমন কনটেন্ট স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। এবারের মুখোমুখি বিতর্কে ট্রাম্প তার ৮১ বছর বয়সী প্রতিদ্বন্দ্বীর মানসিক সক্ষমতা নিয়ে আক্রমণের সুযোগ নেবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ওদিকে বয়স নিয়ে বাইডেনও হয়ত ট্রাম্পকে খোঁচা দিতে ছাড়বেন না।

দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বয়সের এই দিকটি থেকে দেখতে গেলে এবারের বিতর্কে তাদের জন্য খাঁড়া হয়ে আছে বিশেষত, তরুণ প্রজন্মের মন জয় করার বিষয়টি। তরুণদের কেউ কেউ রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে বাইডেনের বৈদেশিক, অর্থনৈতিক নীতি ভালভাবে সামলানোর দক্ষতার কারণে তাকে ভোট দিতে রাজি থাকলেও মনে মনে তারা কম বয়সী একজনকেই ভোট দেওয়ার কামনা করে, যে ব্যক্তি তরুণ-বৃদ্ধ সবারই প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। এদিক থেকে বাইডেনের অবস্থান দুর্বল বলেই মনে করেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অ্যাটর্নি নিকোলাস। কারণ তার মতে, তরুণরা দেশ বা জাতি নিয়ে বড় বড় বক্তৃতা শুনতে চায়না, তারা চায় সক্রিয়ভাবে কাজ করা দেখতে। প্রেসিডেন্ট কতটা পরিপক্ক,ধীরস্থির সেটি তাদের দেখার বিষয় নয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার বিতর্কে লাখো মানুষ পর্দায় চোখ রাখবে কেবল বিভিন্ন বিষয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর যুক্তিতর্ক শোনার জন্যই নয়, বরং তাদের স্ট্যামিনাও এর মধ্য দিয়ে যাচাই করবে জনতা। আর তাই বয়স নিয়ে ভোটারদের ভয় দূর করতে যথেষ্ট দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই কথা বলতে হবে তাদের। বিশেষ করে বাইডেনের জন্য আত্মবিশ্বাস নিয়ে দক্ষভাবে এবং কিছুটা লড়াকু মনোভাব নিয়ে কথা বলা বাঞ্ছনীয়।

সূত্র: বিবিসি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ