একই জেলায় পনেরো বছর নীলফামারী জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তার সীমাহীন লুটপাট।। দেখার কেউ নেই

প্রকাশিত: ৬:২৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২৫

একই জেলায় পনেরো বছর নীলফামারী জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তার সীমাহীন লুটপাট।। দেখার কেউ নেই

মিজান মহসিন, নীলফামারী:

ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের দোসরের বিষাক্ত ছোবল থেকে রেহাই পায়নি দেশের প্রাণী সম্পদ দপ্তরের নীলফামারী জেলা ও সৈয়দপুর উপজেলা কার্যালয়। ইচ্ছে আইনে অফিসে চকাচলসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় কোটি-কোটি লুটপাট ও একই জেলায় ১৫ বছর কাটালেও দেখার কেউ নেই।

জানা যায়, রাশেদুল হক নামে ওই কর্মকর্তা সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস প্রধান থাকা অবস্থায় নিয়োগ দেয়া হয় ১৫ জন
এ আই টেকনিশিয়ান, ফিল্ড ফ্যাসিলেটর, এলএসপি ও ভ্যাক্সিনেটর। তিনি প্রত্যেকের কাছে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে এ নিয়োগ সম্পন্ন করেন তিনি। ৫ বছর আগে ওই নিয়োগে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। নেওয়া হয়নি চাকরী প্রার্থীদের কোন পরীক্ষা। অফিস প্রধান ক্ষমতাবলে পছন্দনীয় ব্যাক্তিদের নিয়োগ দেন।

এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সাথে ওই দপ্তরের প্রায় লাখ টাকা মূল্যর কয়েকটি মেহগিনি গাছ কর্তন করে বাড়ীর আসবাব তৈরী করেন। এ নিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সদস্যদের মযানেজ করায় চাপা পড়ে সরকারী গাছ কর্তনের বিষয়টি। গ্রহন করেন করোনাকালীন প্রণোদোনা। উর্ধতনদের ম্যানেজ করে বাগিয়ে নেন বদলী পদন্নোতি। বনে যান জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা। সেখানে দপ্তরটির কয়েকটি শাখার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।

নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগ নেতার সাথে স্থানীয় খামারীদের বঞ্চিত করে কোন খামার না থেকেও তার স্ত্রীর নামে দুধ সংগ্রহের পর বিক্রি ব্যাবসাটি হাতিয়ে নেন। এতে স্থানীয় দুধ উৎপাদন খামারীগণ প্রতিবাদ করলেও সুফল মেলেনি। নিয়েছেন বেসরকারী খাদ্য কোম্পানির ডিলারশিপ। দুধের পর ডিম নিয়ে কেলেংকারীতে জরিয়ে পরেন পশু সম্পদ ওই কর্মকর্তা। তিনি দায়িত্ব পালনকালে নীলফামারীর সরকারী হাসের খামার দেখাশোনা করতেন।

৬০০টি হাসের ডিম উৎপাদন ডিম দেখাতেন এক থেকে দেড়শতটি। আবার ৩০০ হাসের দেখাতেন ৫০টি। অবশিষ্ট্য ডিম গোপনে বিক্রি করতেন। সাথে ইনকিউবিটরে বাঁচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করেন। হাসগুলোকে ১ বস্তা খাদ্য দিলে, ভাউচার করতেন ২০ বস্তার। তার অনিয়মের রাম রাজত্বে কোন কিছুই তার বাদ যেত না। সরকারী কর্মকর্তা হওয়ায় তার অফিসের সকল আর্থিক খাতে নিজেকে জরাতেন।

প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক দুধ উৎপাদন খামারীকে বঞ্চিত করেছেন। এলডিডিপি প্রকল্পের অধীনে বাগিয়ে নিয়েছেন দুধ শীতলীকরণ কেন্দ্র। এই কেন্দ্র বাবদ সরকারী কোষাগারের প্রায় ২৫ লাখ টাকা অনুদান নিয়েছেন। কোভিড-১৯ এর প্রনোদোনার টাকাও নিয়েছেন। তবে তার কোন কেন্দ্র নেই। গরু নেই, নেই খামার।

স্ত্রী ফাহিমা রাশেদ উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের বাগডোকরা সমিতির সভাপতি দেখিয়ে সরকারী সুযোগ সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন। আবার ফ্রেস ফিডের দোকানসহ ইয়োন বায়োসায়েন্স নামক একটি কোম্পানরি সাইলেজ বিক্রয়ের ডিলারশীপ, প্রাইভেট কোম্পানির হিমায়িত সিমেনের ডিলার ও বি-কেয়ার এনিমেল হেলথ নামে একটি ঔষধের কারখানায় রয়েছে যৌথ মালিকানা। তার সকল ব্যাবসা বিভিন্ন নামে রয়েছে মালিকানা।

সব মিলিয়ে তিনি একজন নামকরা ব্যাবসায়ী। যা তিনি নিজেই বাজারজাতে কাজ করছেন। তার ডিলারশীপের পণ্য বাজারজাতে নিজেই কাজ করছেন। সাথে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে উপপরিচালক কত্রিম প্রজননের থাকায় সেখানে রয়েছে অনেক অবৈধ আয়ের উৎস। এসব উৎস কখনই ছাড় দিতেন না।

তিনি খামারীগণকে প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার নামে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তাকে চাপ দিতেন। উদ্দেশ্য সফল না হলে তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন বেনামী পত্র লিখে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাতেন। এমন কর্মকান্ডেই তিনি থামতেন না। তার অফিসে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে একজন থেরাপিষ্ট খাকলেও তিনি ওই পদ জবর দখলে রেখে ছিলেন।

এমনকি সরকারের বাধ্যকতা পালনীয় কর্মসুচীতে তিনি থাকতেন অনুপস্থিত। গত২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতংক দিবসে তিনি যাননি। ১১ অক্টোবর বিশ্ব ডিম দিবসে দেখা যায়নি। সরকারী হাঁস খামারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকার সময় আয়ন ব্যায়ন ক্ষমতা না থাকলেও মানতেন না। তার সমস্ত মন্দ কাজের পিছনে ছিল নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবের ছিল আর্শিবাদ।

তাই তার বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটি করার সাহস পেতনা। দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র নিয়ে উপজেলার সকল খামারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। খামারীরা বলেন, ওই প্রকল্প পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে আমাদের। অথচ আমরাই জানলাম না। যার গরু নেই, খামার নেই। তাকে দেওয়া হল। এটা বিস্ময়ের বিষয়।

সৈয়দপুর উপজেলা দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারের সভাপতি মো: শাহীদ আজিজ বলেন, তার চেয়ে যোগ্য কি কেউ ছিল না? আমাদের জানা হয় নি কেন? আর একজন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার স্ত্রী খামার না থেকেও কিভাবে পায়? কিভাবে তাকে দেয়া হল? বাস্তবায়ন হয়নি কেন? সরকারী অর্থ এভাবে লুটপাট হবে, দেখার কি কেউ নেই। হতাশা আর আক্ষেপের স্বরে তিনি দুর্ণীতির সাথে জরিত সকলের শাস্তির দাবি করেন।

উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নে বসবাসকারী ডা: রাশেদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই বছর আগে খামার ছিল। তাই প্রনোদোনা পেয়েছি। আর দুধ শীতলীকরণে স্থানীয় কেন্দ্রটি কেউ নিতে চাইলে ছেড়ে দেব। বাকি অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সাথে ডিএলওর সর্ম্পক ভাল না। তাই বিষাদাগার ছড়াচ্ছেন।

এ নিয়ে নীলফামারী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন। তাই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো জানতাম না। তবে বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে উর্দ্ধত্বনদের জানানো হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ