বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করা নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ, ডেমোক্র্যাট শিবিরে উল্লাস

প্রকাশিত: ৭:১৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫

বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করা নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ, ডেমোক্র্যাট শিবিরে উল্লাস

অনলাইন ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা স্থগিতের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসনকে বৈদেশিক সহায়তা চালু রাখার জন্য সাময়িক অনুমতি দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মার্কিন জেলা জজ আমির আলী। এর বিপরীতে করা ট্রাম্প প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সেই আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেন। তবে আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই সব বিদেশি সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই আদেশে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ বিশ্বব্যাপী জীবন রক্ষাকারী খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার বিতরণ ব্যাহত করে। পাশাপাশি ইউএসএআইডির গণহারে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রভাবও পড়ে।

গত মাসে জেলা জজ আমির আলী স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ইউএসএআইডিকে ইতিমধ্যে সম্পন্ন কাজের জন্য ঠিকাদারদের বিল পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন; যার সময়সীমা ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত।

কিন্তু সময়সীমা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, এত অল্প সময়ের মধ্যে সুশৃঙ্খলভাবে বিল পূরণ করা অসম্ভব। এরপর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস একটি সংক্ষিপ্ত প্রশাসনিক স্থগিতাদেশ জারি করেন।

ওই স্থগিতাদেশের পর স্থানীয় সময় আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করতে অস্বীকৃতি জানান এবং ট্রাম্প প্রশাসনকে বকেয়া অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেন। তবে বিচারক আলীর তাৎক্ষণিক অর্থ পরিশোধের সময়সীমা ইতিমধ্যেই পার হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা জানাননি আদালত।

কনজারভেটিভ বিচারপতি স্যামুয়েল আলিতো, ক্লারেন্স থমাস, নিল গোরসুচ, ব্রেট কাভানাহ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করেন। বিচারপতি আলিতো তিনজন রক্ষণশীল বিচারপতির সঙ্গে ভিন্নমতে বলেন, ‘একজন জেলা আদালতের বিচারক, তিনি কি মার্কিন সরকারকে ২ বিলিয়ন ডলার অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর ‘‘না’’ হওয়া উচিত, তবে এই আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সম্ভবত অন্য রকম ভাবছে। আমি হতবাক।’

দুটি সাহায্য সংস্থা গত মাসে ট্রাম্পের বৈদেশিক সাহায্যের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এরপর ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার জেলা জজ আমির আলী ট্রাম্প প্রশাসনকে বিদেশি সহায়তা চালু রাখার জন্য সাময়িক অনুমতি দিতে নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে এখনো বিচারপ্রক্রিয়া চলছে এবং আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে আরেকটি শুনানি হবে। সেখানে ইউএসএআইডির সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা হবে।

ট্রাম্প প্রশাসন বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করার পরপরই মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাকে (ইউএসএআইডি) লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। এই সংস্থার কয়েক হাজার কর্মী এবং ঠিকাদারকে ইতিমধ্যে ছাঁটাই করা হয়েছে। অনেককে সাময়িক বরখাস্ত বা প্রশাসনিক ছুটিতেও পাঠানো হয়েছে।

ইউএসএআইডি প্রতিবছর মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা প্রদান করে। তবে ট্রাম্প এবং সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান ইলন মাস্ক এই সংস্থাকে ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ বলে সমালোচনা করেছেন। মাস্ক ইউএসএআইডিকে ‘অপরাধী সংগঠন’ বলেও অভিহিত করেছেন।

এদিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর ডেমোক্র্যাট শিবিরে উল্লাস দেখা গেছে। ক্যাপিটল হিলে ডেমোক্র্যাটরা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রমাণ করে যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাজেট স্থগিত করার ক্ষমতা সীমাহীন নয়।

হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি গ্রেগরি মিকস বলেন, এই অর্থ ইতিমধ্যেই অনুমোদিত ছিল, কাজও শুরু হয়েছিল। তাই সুপ্রিম কোর্ট সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন প্রশাসনের উচিত অর্থ ছাড় করা এবং প্রকল্পগুলো চালিয়ে নেওয়া।

কংগ্রেসের সদস্য প্রমীলা জয়পাল একে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ রায়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প নিযুক্ত বিচারকদের অধীনেও সুপ্রিম কোর্ট দেখিয়েছেন যে কংগ্রেসই বাজেট বরাদ্দের ক্ষমতা রাখে এবং নির্ধারিত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে অর্থ প্রদান করতেই হবে।

প্রমীলা জয়পাল আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই যে ট্রাম্প প্রশাসন রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে কি না, তবে আমি আশা করি, তারা সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে চলবে।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ