প্রকাশিত: ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২৫
অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী ছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তাঁর বিরুদ্ধে দেশ থেকে অর্থ পাচার করে যুক্তরাজ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কেনার অভিযোগ উঠেছে। তবে আওয়ামী লীগের এই নেতা কেবল যুক্তরাজ্যে নয়, জমি কিনেছেন যুক্তরাষ্ট্রেও।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ফ্লোরিডার ওকালা ন্যাশনাল ফরেস্টের পশ্চিম সীমান্তে ৫০ শতাংশের মতো (আধ একর) জমি কিনেছিলেন।
এই জায়গা অরল্যান্ডো থেকে উত্তরে এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। এই ভূমি নিয়ে শিগগিরই আন্তর্জাতিক মামলা হতে পারে। এই জায়গা এখনো বনভূমির অংশ। সেখানে কোনো কাজ কর্ম হয়নি বা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।
স্থানীয় মেরিয়ন কাউন্টির সম্পদ মূল্যায়নকারীর রেকর্ডে দেখা গেছে, এই জমি দুই দশক আগে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী কিনেছিলেন। জমিটি কেনা হয়েছিল ৪৮ হাজার ডলারের বিনিময়ে। এই জমি ক্রয় মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জাবেদ যে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তার অংশ।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জাবেদ ও তাঁর নিকটাত্মীয়দের অন্তত ২৯৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে অর্জিত ৪৮২টি সম্পত্তি শনাক্ত করেছে। এগুলো কেনা হয়েছিল ১৯৯২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে।
জাবেদের সম্পত্তিগুলোর মধ্যে—দুবাইয়ের চকচকে বুরজ খলিফা জেলা এবং এর পাম জুমেইরা কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জের ফ্ল্যাট, লন্ডনের আশপাশের শহরগুলোর একাধিক ফ্ল্যাট। এর মধ্যে একটি দুই বেডের ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে লন্ডনের স্লাফ রেল স্টেশনের কাছে।
এসব সম্পত্তি কেনায় যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে, সেগুলো এখন ফেরত চাইছে সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছরে যারা বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার চুরি করেছে, তাদের একজন এই সাবেক মন্ত্রী। জাবেদ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্যগুলোর একজন।
শেখ হাসিনার ভূমিমন্ত্রী হওয়ার আগে জাবেদ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এমপি ছিলেন। ২০২৩ সালে তিনি সংসদে ঘোষণা করেন, তাঁর ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ আছে।
২০১৭ সাল পর্যন্ত তাঁর সর্বশেষ ঘোষিত আয়কর রিটার্নে বলা হয়, তাঁর কোনো বৈদেশিক আয় নেই। জাবেদ এবং তাঁর কিছু আত্মীয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি একটি ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দ্বারা চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান মানসুরের অনুমান, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে অন্তত ১৬ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘এটা জনগণের টাকা, তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এই টাকা প্রকাশ্য দিবালোকে নিয়ে গেছে।’
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আওয়ামী রেজিমের সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ ধনকুবেরদের একজন। তাঁর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘তিনি ভূমি মন্ত্রী ছিলেন এবং মনে হচ্ছে, তিনি জমি খুবই ভালোবাসেন।’
এফটির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জাবেদ এবং তাঁর নিকটাত্মীয়রা এত বেশি সম্পত্তির মালিক যে, তাদের সব তথ্য সামনে আসেনি। এই পরিবারের মালিকানায় যুক্তরাজ্যে ৩১৫টি, দুবাইয়ে ১৪২টি, নিউইয়র্কে ১৬টি, ফ্লোরিডায় ৬টি এবং নিউজার্সিতে ৩টি সম্পত্তি আছে।
এফটি আরও শনাক্ত করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে থাকা অন্যান্য বাংলাদেশি অভিজাত সিঙ্গাপুর এবং কানাডার মতো দেশে ৫৭৮ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি অর্জন করেছে।
ইউনূস অভিজাতদের দ্বারা ব্যাংক লুটের অভিযোগকে ‘মহাসড়ক ডাকাতি’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, অর্থ ‘ফিরিয়ে আনা আবশ্যক’। হাসিনার আমলের পর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করছে।
কর্তৃপক্ষ আওয়ামী শাসনের আমলে লুট ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে। কারণ, দেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য এই অর্থ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
এই প্রচেষ্টা দেশের বিচার ব্যবস্থা এবং আমলাতন্ত্রের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। কারণ, এটি দুই বিভাগ এখনো হাসিনার অনুগতদের দিয়ে পূর্ণ। ড. ইউনূসের শিবির অবশ্য এই বাধার বিষয়ে সতর্ক।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই এমন রেজিমের পতনের পর ক্ষমতায় আসা সরকারগুলো অর্থ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা আইনি বা অন্যান্য কারণে ব্যর্থ হয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আংশিক সাফল্য পাওয়া গেছে। অবশ্য বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টায় ইউএস ট্রেজারি তথা মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।
অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হবে—অভিযুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে দেশে মামলা দায়ের করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য স্থানে আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক আইনি সহায়তা অনুরোধ প্রস্তুত করা যা ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক মামলার পথ প্রশস্ত করবে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘যদি আমরা মনে করি যে, বিশ্বটা একসঙ্গে বসবাসকারী বন্ধুদের একটি কমিউনিটি এবং যদি আমার টাকা চুরি হয়ে আপনার দেশে জমা হয়, তাহলে আমি মনে করি এটা ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সাহায্য করার একটি বাধ্যবাধকতা আছে।’
এদিকে, যুক্তরাজ্যে জাবেদের রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্যের আকার, সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী ও হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পত্তি গ্রহণের অভিযোগ অর্থনৈতিক অপরাধ এবং অবৈধ অর্থ প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রবিধানের শক্তি এবং ব্রিটিশ সরকারের নোংরা অর্থের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে।
ব্রিটিশ এফবিআই-খ্যাত ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি আয়োজিত যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয় কেন্দ্র বলেছে, তারা ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে থাকা বড় দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের প্রচেষ্টায় সহায়তা করার সুযোগ খুঁজছে।’
এই বিষয়ে জানতে চেয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি জবাব দেননি। তাঁর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও কিছু সম্পত্তির মালিকানা পাওয়ার অভিযোগ আছে।
তিনি ই-মেইলে বলেছেন, তাঁর নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ আলাদা এবং তিনি তাঁর ক্রয়গুলো সঠিক ‘ডিউ ডিলিজেন্স’-এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা বন্ধক এবং পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের সংযোগ থাকায় তাঁদের পরিবারকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
A Concern Of Positive International Inc
Mahfuzur Rahman Mahfuz Adnan
Published By Positive International Inc, 37-66, 74th Street Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Phone : 9293300588, Email : info.shusomoy@gmail.com,
………………………………………………………………………..
Design and developed by Web Nest