প্রকাশিত: ৭:৩৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশের সংসদ, কংগ্রেসের যৌথ সভায় ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ নামে পরিচিত বার্ষিক ভাষণে, গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য তার নতুন একটি উদ্যোগ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছি, ভূমধ্যসাগরে গাজা উপকূলে অস্থায়ী জেটি স্থাপন করার জন্য, যেখানে খাবার, পানি, ওষুধ এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র বহনকারী বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। এই অস্থায়ী জেটির ফলে, বিশাল পরিমাণ মানবিক সাহায্য প্রতিদিন গাজায় ঢুকতে পারবে।’ তবে, তিনি আরো বলেন ‘কোনো আমেরিকান সৈন্য ভূখণ্ডে নামবে না।’ প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ভাষণে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সামরিক অভিযানের প্রসঙ্গে বলেন, ‘হামাস এই যুদ্ধ শেষ করতে পারে, ‘বন্দীদের মুক্তি দিয়ে, অস্ত্র সমর্পণ করে এবং ৭ অক্টোবর হামলার সাথে জড়িতদের ধরিয়ে দিয়ে।’ তিনি বলেন, ‘এই সঙ্কট শুরু হয় ৭ অক্টোবর, হামাস যোদ্ধা দ্বারা হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে।’ তিনি আরো বলেন, ‘১ হাজার ২০০ নিরীহ নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়েকে হত্যা করা হয়, অনেকে যৌন আক্রমণের শিকার হন।’ বাইডেন বলেন, ‘হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার ইসরাইলের আছে।’ বাইডেন আরো বলেন, ‘হামাস ‘বেসামরিক লোকজনের মাঝে লুকিয়ে থাকে এবং কাজ চালায়। তাই ইসরাইলের ওপর বাড়তি দায়িত্ব আছে।’ তিনি বলেন, ‘তবে ইসরাইলের মৌলিক দায়িত্বও রয়েছে, গাজার নিরীহ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ রাখার।’ বাইডেন বলেন, ‘৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, যাদের বেশির ভাগ হামাস নয়। এদের হাজার হাজার, নিরীহ নারী ও শিশু। প্রায় দুই কোটি ফিলিস্তিনি গৃহচ্যুত হয়েছেন এবং বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য, যেটা কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হবে।’
ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন : ভাষণের শুরুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইউক্রেনে দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়ার আগ্রাসনের দিকে। বাইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়ে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে-বিদেশে গণতন্ত্র আক্রমণের মুখে এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করে ইউরোপ জুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাইডেন বলেন, ‘এই ঘরে যদি কেউ মনে করেন যে পুতিন ইউক্রেনেই থামবে, আমি তাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি, তিনি থামবেন না।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা যদি ইউক্রেনের পাশে থাকি এবং নিজেদের রক্ষা করার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করি, তাহলে ইউক্রেন পুতিনকে থামাতে পারবে। ইউক্রেন শুধু সেটাই চাচ্ছে। তারা আমেরিকান সৈন্য চাইছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসন রোধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সৈন্য পাঠাবে না।’ বাইডেন বলেন, ‘ইউক্রেনে কোনো আমেরিকান সৈন্য যুদ্ধে লিপ্ত নেই। এবং আমি সেভাবে রাখতে বদ্ধপরিকর।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘ইউক্রেনের জন্য সাহায্য আটকে দিচ্ছে, যারা বিশ্বে আমেরিকান নেতৃত্ব চায় না।’ তিনি বলেন, ‘পুতিনকে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ইতিহাস তাকিয়ে দেখছে।’ তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে ইউক্রেন হুমকির মুখে পড়বে। ‘ইউরোপ হুমকির মুখে পড়বে। মুক্ত বিশ্ব হুমকির মুখে পড়বে। যারা তাদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের সাহস বাড়বে।’ প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘পুতিনের জন্য আমার বার্তা খুব সোজা-সাপটা। আমরা মুখ ঘুরিয়ে নেব না। আমরা মাথা নত করবো না। আমি মাথা নত করবো না।’
চীনের সাথে সম্পর্ক :
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘তিনি অনেক বছর ধরে রিপাবলিকান পার্টির ‘বন্ধু’ এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে শুনেছেন যে চীনের অগ্রগতি হচ্ছে, আর আমেরিকা পিছিয়ে পড়ছে। তারা বিষয়টি উল্টা করে দেখছেন। আমেরিকা আগাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি বিশ্বের সেরা অর্থনীতি। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর আমাদের দেশজ উৎপাদন বেড়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘চীনের সাথে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি এক দশকের বেশি সময়ে সবচেয়ে কম। আমরা চীনের অন্যায্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করছে, এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জোট নতুন করে সক্রিয় করছে।’ প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করেছি যে সব চেয়ে আধুনিক আমেরিকান প্রযুক্তি চীনা সামরিক সরঞ্জামে ব্যবহার করা যাবে না।’ তবে, তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে প্রতিযোগিতা চায়, সঙ্ঘাত নয়।’ তিনি বলেন, ‘চীন বা অন্য কারো সাথে একুশ শতকের প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করার জন্য আমেরিকা খুব শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।’
নারী অধিকার : প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভাষণের বেশিভাগ জুড়ে ছিল অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, যার মধ্যে একটি ছিল নারী অধিকার। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ভাষণে নারী অধিকার, বিশেষ করে গর্ভপাতের অধিকার ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন। এই বিতর্কের মূলে রয়েছে ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের এক সিদ্ধান্ত, যেটা ‘রো বনাম ওয়েড’ নামে পরিচিত। এই রায় আমেরিকান নারীদের কিছু বিধি-নিষেধের মধ্যে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার দেয়। কিন্তু ২০২২ সালের জুন মাসে সুপ্রিম কোর্ট ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলার রায় নাকচ করে দেয়। বাইডেন বলেন, ‘রো বনাম ওয়েড’ রায় পাল্টে দেয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তে লেখে, ‘নারীরা রাজনৈতিক বা নির্বাচনী ক্ষমতাবিহীন নয়।’ আপনি মশকরা করছেন না! বোঝা যাচ্ছে, যারা রো বনাম ওয়েড বাতিলের পক্ষে সোচ্চার, যে আমেরিকায় নারীদের ক্ষমতা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারনাই নেই। কিন্তু প্রজনন অধিকার যখন ব্যালটে ছিল, ২০২২-২৩ সালে তারা জয়ী হয়, এবং ২০২৪ সালে তারা আবার বুঝতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘আমেরিকানরা যদি এমন কংগ্রেস নির্বাচিত করে যারা সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার সমর্থন করে, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, আমি রো বনাম ওয়েড আবার দেশের আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো।’ প্রেসিডেন্ট বাইডেন নভেম্বরের নির্বাচনে ২০২০ সালের মতো রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ ডনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হবেন। তার ভাষণে ৮১-বছর বয়স্ক বাইডেন নিজের মূল্যবোধ ব্যাখ্যা করার সময় প্রায় সমবয়সী ট্রাম্পের নাম না করেও তার দিকে ইঙ্গিত করেন। বাইডেন বলেন, ‘আমার জীবন আমাকে শিখিয়েছে স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের উপর আস্থা রাখতে। যে মৌলিক মূল্যবোধ আমেরিকাকে সংজ্ঞায়িত করে, সেই সততা, আত্মসম্মান, সমতার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। সবাইকে সম্মান করা। সবাইকে ন্যায্য সুযোগ দেয়া। ঘৃণাকে কোনো নিরাপদ স্থান না দেয়া। এখন, আমার বয়সী কেউ ভিন্ন একটা দৃশ্য দেখেন, আমেরিকার গল্প যেখানে রয়েছে অসন্তোষ, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসা। সেটা আমি নই।’ সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
A Concern Of Positive International Inc
Mahfuzur Rahman Mahfuz Adnan
Published By Positive International Inc, 37-66, 74th Street Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Phone : 9293300588, Email : info.shusomoy@gmail.com,
………………………………………………………………………..
Design and developed by Web Nest