জাবিতে ধর্ষণের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জেএসএফ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪

জাবিতে ধর্ষণের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জেএসএফ বাংলাদেশ

হাকিকুল ইসলাম খোকন,সিনিয়র প্রতিনিধিঃজাতীয় সম্মিলিত ফোরাম জেএসএফ এক বিবৃতিতে বলেছে , ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বামীকে হলে জিম্মি করে তাঁর স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। জাবিতে সেঞ্চুরি মানিকের উত্তরসূরিরা জেগে উঠেছে! ১৯৯৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মানিক ধর্ষকদের মদদ দিয়েছিলো উপাচার্য ও সরকার । ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে উল্লাস করেছিল ছাত্রলীগের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে খুনিদের মদদ দিয়েছিলেন । কিন্তু আজকে আমরা আবার দেখতে পেয়েছি আমাদের এই ক্যাম্পাসে একদল নষ্ট মানুষ, যারা ক্ষমতায় বসে আছে, যারা নির্লজ্জ, অসভ্য, যাদের কোনো বোধ নেই, বুদ্ধি নেই, তারা ওই চেয়ার দখল করে বসে আছে।’খবর বাপসনিঊজ।

বিবৃতিতে বলেছে , ‘ক্যাম্পাসে এখন প্রায় আড়াই হাজার অছাত্র রয়েছে। এই ধর্ষণ কোনো বিছিন্ন ঘটনা নয়, যত দিন প্রশাসনের মদদে এই ক্যাম্পাসে অছাত্র, অবৈধ ছাত্র অবস্থান করবে, ছাত্রলীগ নামধারী অছাত্ররা নিয়োগ বাণিজ্য করবে, চাঁদাবাজি করবে, তত দিন এই ক্যাম্পাস থেকে অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়। আমরাও উপাচার্যকে বলে দিতে চাই, আমরা অনেক বড় বড় উপাচার্যকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছি। আমরা আপনাকেও বিতাড়িত করে ছাড়ব, যদি আপনারা তাদের বিচার না করেন। আমরা এই ধর্ষকদের ফাঁসি চাই, এই ধর্ষণকারীদের মদদদাতা প্রশাসনের পদত্যাগ চাই, এই ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এই ক্যাম্পাসে কোনো অবৈধ, সন্ত্রাসী, অছাত্র, মাদকব্যবসায়ী থাকবে না। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে প্রয়োজনে আমি শহীদ হয়ে যাব। যেসব হলে প্রাধ্যক্ষ অছাত্রদের দিয়ে হল চালায় তিনি আর প্রাধ্যক্ষ থাকতে পারবেন না।’

জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম জেএসএফ বিবৃতিতে বলেছে , ‘আপনারা জানেন এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকলেও তার কোনো সঠিক বিচার হয়নি। কোনো ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। প্রত্যিটি ঘটনার সঙ্গে থাকে একটা যোগাযোগ, একটা কার্যকারণিক সম্পর্ক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অপরাধের বিচার হয় না। গতকালের ঘটনায় দেশব্যাপী আমার ক্যাম্পাসকে আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, পত্রিকার মাধ্যমে লজ্জিত হয়েছে, অপমানিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, কোনো ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হয়, তাহলে যারা এই ছলচাতুরীর আশ্রয় নেবে, তাদের আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করব।’

‘ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে প্রশ্নহীন ক্ষমতার কারণে। দেশে ফ্যাসিবাদী যে শাসনকাঠামো চেপে বসেছে, তার বাইপ্রোডাক্ট হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগরের এই ধর্ষণকাণ্ড। ফ্যাসিবাদী শাসনে আদালতসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে ন্যায়বিচার পাওয়া আর সম্ভব নয়। ছাত্রলীগের দুষ্কর্মের দায় ক্ষমতাসীন দখলদার সরকারকে নিতে হবে।’

জেএসএফ বিবৃতিতে আরো বলেছে , আমরা সকলেই জানি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরী পালন করে জাতির জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছিল ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা মানিক। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেট এমসি কলেজ প্রাঙ্গণে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করেছিল ছাত্রলীগের চিহ্নিত ৬ সন্ত্রাসী। কিন্তু কোন ঘটনারই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই দেশের নানা স্থানে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ধর্ষণ, নির্যাতন, হয়রানীর শিকার হচ্ছে নারীরা। গত কয়েক বছরে ধর্ষণের নজিরবিহীন রেকর্ড হয়েছে বাংলাদেশে। সাথে সাথে রয়েছে ধর্ষণের পর হত্যা ও বিভৎসতা।

শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রশাসন কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। সরকার ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদেই শিক্ষাঙ্গনগুলোকে ধর্ষণ, সন্ত্রাস, মাদক ও অপকর্মের আস্তানায় পরিণত করেছে ছাত্রলীগ।

দায়ভার না দিয়ে জাতির সাথে তামাশা করে আওয়ামীলীগের নেতারা উস্কানি দিয়েছে বলে বিবৃতিতে আরো বলেছে , দেশের বেশিরভাগ ধর্ষণ ও খুনের সাথে যে সরকার-দলীয় লোকজন জড়িত, তা বারবার গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। কিন্তু কোনটিরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। ফলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন জনপদেই যেন আজ নারীরা নিরাপদ নয়। সরকারের সরাসরি প্রশ্রয়ে দেশকে ধর্ষণের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে সন্ত্রাসীরা। যা গোটা জাতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। শিশু, তরুণী, শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা শঙ্কায় দিন যাপন করছে। এটা কোন সভ্য সমাজ বা দেশের চিত্র হতে পারে না।

অপরাধীদের দায়ভার অস্বীকার করার নতুন তামাশা হচ্ছে দল থেকে বহিস্কার। রকারের মদদে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক অপকর্মে জনগণ চরম ক্ষুব্ধ। দেশবাসী ও ছাত্রসমাজ সন্ত্রাসীদের কাছে তাদের মা-বোনদের সম্ভ্রমহানীর এ ধারা কোনভাবেই মেনে নিবে না। সরকারের যদি বিচারহীনতা ও প্রশাসন অনৈতিক মদদ অব্যাহত রাখে তাহলে মোকাবেলা করতে ছাত্রসমাজ দেশবাসীকে সাথে নিয়ে অভিশপ্ত নরপশুদের মোকাবেলায় দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। আর তখন যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকার ও প্রশাসনকে তার দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে ছাত্রলীগ নামক এই পাপিষ্ঠ সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। অনতিবিলম্বে জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া সহ দেশের সকল ক্যাম্পাস নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ