নোয়াখালীর কোরবানির হাট কাঁপাচ্ছে ২০ মনের ‘টাইটানিক’, ৪ লাখ টাকা বিক্রির আশা

প্রকাশিত: ৮:০৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২৪

নোয়াখালীর কোরবানির হাট কাঁপাচ্ছে ২০ মনের ‘টাইটানিক’, ৪ লাখ টাকা বিক্রির আশা

ডেস্ক রিপোর্ট: ভাগ্য পরিবর্তনে গিয়েছিলেন বিদেশ। ভাগ্য তেমনটা সহায় হয়নি বলে ফিরে এসেছেন দেশে। ৫ বছর যাবত করছেন “গরু মোটাতাজা করণ প্রক্রিয়া” । এবছর উঠিয়েছেন ৭৫ টি কোরবানি যোগ্য গরু। হাট কাঁপাচ্ছে এবারের সব থেকে বড় গরু ২০ মণের ‘টাইটানিক’। ক্রেতারা ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা দাম বললেও ৪ লাখ বিক্রির আশা করছেন, তরুণ খামারি কাজী ফিরোজ আহমেদ। জানা যায়, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডস কাজী বাড়ির বাসিন্দা কাজী ফিরোজ আহমেদ। পতিত জমিতে ৫ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছেন ‘কাজী এগ্রো’ নামের গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প । প্রতিবছর বড় বড় গরু বিক্রির সুনাম আছে তার। প্রাণিসম্পদ মেলায় একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছে সফল উদ্যোক্তা কাজী ফিরোজ আহমেদ। তার খামারে উন্নত মানের গরু উৎপাদন করার দক্ষতার কারণেই পুরস্কৃত হয়। শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ওটারহাট গরু বাজারে ২০ মণের ‘টাইটানিক’কে তোলেন কাজী ফিরোজ আহমেদ। বিশাল আকৃতির গরুটিকে দেখতে ভিড় জমায় হাটে আসা ক্রেতা ও সাধারণ দর্শনরা। হাটে আসা মো. আমির হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, বিশাল আকৃতির গরু এবছর আর দেখিনি। টাইটানিক নামের সাথে কাজের মিল আছে। দেখতে মাশাআল্লাহ। ন্যায্য দাম মিলুক এ কামনা করছি। তবে টাইটানিককে নোয়াখালী না রেখে ঢাকা বা চট্টগ্রামে নিয়ে গেলে বেশি দাম পেতেন। কাজী এগ্রোতে চাকুরে মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ২০ জন খামারে চাকরি করি। টাইটানিক আমাদের খামারের সব থেকে শান্ত গরু। সে আমাদের আদরেরও। আমরা দেশিয় খাদ্য দিয়ে গরুটিকে লালন পালন করেছি। ভালো দাম পেলে আমাদের ভালো লাগবে। মালিক খুশী থাকলে আমরাও খুশী। কাজী ফিরোজ আহমেদ বলেন, ২২০ টি গরু আমার খামারে আছে। এবছর ৭৫ টি কোরবানি যোগ্য বলে বিক্রি করছি। এর মধ্যে টাইটানিক সব চাইতে বড় গরু। ২০ মণের এ গরুর দাম চেয়েছিলাম ৫ লাখ টাকা। ক্রেতারা ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেছেন। আসলে বড় গরুর কদর সবাই বুঝেনা। ঢাকা হলে আমার গরুটি ভালো দাম পেতাম। তারপরও আমি ৪ লাখ টাকা হলে বিক্রি করে দেবো। কাজী ফিরোজ আহমেদ আরও বলেন, ৫ বছরে আমার খামার থেকে অনেক বড় গরু বিক্রি হয়েছে। আমি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছি। আমি দেশিয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন করি। আমার গরুর গোশতের স্বাদও অন্যরকম। বিদেশ ফেরত আমি গরুর খামারে মনোনিবেশ করে ভালই আছি। আশাকরি তরুণরাও খামারে আস্থা রাখলে ভালো করতে পারবে। দেশে আমিষ ও দুগ্ধজাত খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হবে। সিরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মিকন বলেন, কাজী ফিরোজ আহমেদ দেশে খামার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি ভালো মানের খামারি। তাকে দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি সফলতার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান করেছেন। আমি তার সফলতা কামনা করছি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাসলীমা ফেরদৌসী বলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় প্রাণিসম্পদে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখানে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি পালন করা হয়। এছাড়াও আধুনিক খামার করে উদ্যোক্তারা ভালো করছেন। প্রাণিসম্পদ অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় খামারীরা লাভবান হচ্ছেন। কাজী ফিরোজ আহমেদ সফলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা সর্বদা খামারীদের পাশে আছি। যেকোনো প্রয়োজনে খামারীরা আমাদের ডাকলে ছুটে যাই। তাদের সফলতা আমাদের দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ ও টেকসই করবে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাটে গরু ক্রয়ের পাশাপাশি খামারে লাইভ ওয়েটে গরু ক্রয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। নোয়াখালী জেলায় মোট ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৮ টি গবাদি পশু রয়েছে। তারমধ্যে আমাদের চাহিদা আছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৮৩ টি। জেলার চাহিদা পূরণ করে প্রায় ৩০ হাজার ৩৯৫ টি গবাদি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ