ডিগ্রিতে নিয়মিত ক্লাস ও ফলাফল দ্রুত ঘোষণা করা হোক

প্রকাশিত: ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৪

ডিগ্রিতে নিয়মিত ক্লাস ও ফলাফল দ্রুত ঘোষণা করা হোক

ফিচার ডেস্ক:

বিষয়টি নিয়ে মনের মাঝে যত কষ্ট-যাতনা, অস্বস্তি-ক্ষোভ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা-দুর্ভাবনাই থাক, লেখাটি একটি হালকা জোক দিয়ে শুরু করতে চাই। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ছেলে খুশিচিত্তে বাবাকে বলল-‘জানো বাবা, আজ স্কুলে প্রতিযোগিতায় তিনটি বিষয়ে আমি প্রথম হয়ে পুরস্কার পেয়েছি। এতে স্কুলের স্যার এবং সব ছাত্রছাত্রী দারুণ খুশি।’ শুনে বাবা বললেন, ‘তোমার এমন সাফল্যের খবরে আমিও অত্যন্ত খুশি। তা আমাকে খুলে বল তো কোন কোন বিষয়ে তুমি প্রথম হয়ে পুরস্কার পেয়েছ?’ ছেলে বেশ আগ্রহ সহকারে বলতে শুরু করল-‘প্রথমটা পেয়েছি সুন্দর হাতের লেখার জন্য। দ্বিতীয়টা স্মরণশক্তির জন্য। আর তৃতীয়টা…।’ এ পর্যন্ত বলে হঠা ৎ সে থেমে গেল।

আবারও বলতে চেষ্টা করল-‘তৃতীয়টা…’; কিন্তু না, তার মনেই আসছে না। শেষবার সে স্পষ্ট করেই বলে ফেলল-‘তৃতীয়টা এ মুহূর্তে আমার মনে আসছে না।’ ‘বাগাড়ম্বর’ আর ‘আত্মতুষ্টি’ যাই বলা হোক, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা ও ত্রুটিবিচ্যুতিগুলোর কথা সহজে এবং অল্পকথায় বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। অথচ এ নিয়ে চারদিকে কেবল গলাবাজি আর গলাবাজি। আমরা ‘এই করেছি, সেই করেছি’, আমাদের ‘এই আছে, সেই আছে’, আমরা ‘এই করব, সেই করব’-আরও কত কী! শুরুটা সেই আশির,
নিদেনপক্ষে নব্বইয়ের দশকে তো বটেই। ‘উন্নয়নের সরকার’, ‘শিক্ষাবান্ধব সরকার’, ‘শিক্ষকবান্ধব সরকার’…।

আর সময় সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবিধারী ব্যক্তির নামের সঙ্গে বিশেষণ সংযুক্তির তো কোনো হিসাবনিকাশই নেই। কারা তৈরি ও প্রয়োগ-ব্যবহার করে এসব অভিধা আর বিশেষণ? অন্য কেউ যেমনই

হোক, শিক্ষক শ্রেণিটি এদিক দিয়েও বেশ এগিয়ে! শৈশবে মুখস্থ করা স্বনামে পরিচিত মহাজন রামসুন্দর বসাক প্রণীত ‘বাল্যশিক্ষা’ বইটির কথা খুবই মনে পড়ে। শিশুদের জন্য লেখা সুখপাঠ্য এ বইয়েরই একটি বাক্য হচ্ছে, ‘অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস পায়’। শ্রেণিকক্ষে (যখন শিক্ষকতায় ছিলাম) প্রসঙ্গক্রমে কিংবা শ্রেণিকক্ষের বাইরে কখন সুযোগ হলে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আমি এ বাক্যটি প্রায়ই উচ্চারণ করে থাকি। অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস পায়; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কার বা কাদের বিদ্যা হ্রাস পায়? শিক্ষার্থীর, নাকি যিনি শিক্ষাদান করেন সেই শিক্ষকের? এক কথায় এর সহজ উত্তর-সবার। যে কোনো বিষয়েই চর্চা বা অভ্যাস না থাকলে সবার বিদ্যাই ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।

আর কমতে কমতে তলানিতে পড়ে, একসময় তা একেবারে নিঃশেষই হয়ে যেতে পারে। দেশে উচ্চশিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীদের ক্লাস না করার প্রবণতা দিনদিন যে কী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, তা অল্প কথায় সহজে বলে শেষ করা যাবে না। বিষয়টি একেবারে ভাবনারও অতীত এবং সবার জন্যই গভীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার। এছাড়া গোটা জাতির জন্যই সমূহ দুর্গতিরও আলামত বলে মনে করি। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে যেমন-তেমন, এর উপরের স্তরগুলোর হালহকিকত
একেবারেই নাজুক

দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, এমনকি অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও কথাটি সত্য যে, বছরের কোনোদিনই একটি ক্লাসেও উপস্থিত না থেকে কিংবা নামকাওয়াস্তে দুই-চার দিন উপস্থিত থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ডিগ্রি পাস, অনার্স
ও মাস্টার্সের মতো পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। অনিয়মিত নয়, ক্লাসে উপস্থিত না হওয়াদের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসাবেই বছর বছর এ সুযোগটি করে
দিয়ে চলেছে কর্তৃপক্ষ। আর অতি সহজেই সুযোগ পেতে পেতে শিক্ষার্থীদের মাঝে এরূপ ক্লাস না করার প্রবণতা দিনদিন কেবল বেড়েই চলেছে।
পরিস্থিতি যে কী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা শিক্ষার সঙ্গে যারা সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নন, তাদের বোধকরি সহজে বিশ্বাসই করানো যাবে না।

তবু রক্ষা-নিয়ম অনুযায়ী আজকাল এক কলেজের পরীক্ষার্থীকে অন্য কলেজে বসে পরীক্ষা দিতে হয়। তা না করে আগের মতো নিজেদের কলেজেই বসে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে পরীক্ষার হলে এমন অসংখ্য পরীক্ষার্থীর দেখা পাওয়া যেত-যাদের ক্লাসে তো দূরের কথা, শিক্ষকরা ক্যাম্পাসেই কখনো দেখেননি।